তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারছেন না কেন? দেশের বাইরে থাকা নেতার আসল সত্য!

বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক দীর্ঘ অনুপস্থিতি কাটিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফেরার পরিকল্পনা করেছিলেন, তবে তাঁর দেশে ফিরে আসার সিদ্ধান্তে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। গত ৩০ নভেম্বর ২০২৫ তারেক রহমান তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে জানিয়েছেন যে, দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত তাঁর একক নিয়ন্ত্রণাধীন নয়, আর এই সিদ্ধান্ত নিতে তিনি পুরোপুরি স্বাধীন নন। তবে একে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে জল্পনা-কল্পনা চলছে—অথবা বাস্তবতায় তার দেশে ফেরার পিছনে কী কারণ থাকতে পারে?

তারেক রহমান দীর্ঘ সময় ধরে লন্ডনে অবস্থান করছেন। ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর দুর্নীতির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা হয় এবং তিনি ২০০৮ সালে দেশ ছাড়েন। তখন থেকেই তিনি বিদেশে রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণ করেন এবং বিএনপির কার্যক্রম পরিচালনা করেন। যদিও দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে, তার দেশে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত সরকার ও আন্তর্জাতিক চাপের কারণে অমীমাংসিত রয়ে গেছে, তবে সম্প্রতি খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কারণে তার দেশে ফেরার প্রশ্নটি আবারও সামনে চলে এসেছে।

বিএনপির পক্ষ থেকে কোন বিবৃতি?

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত ৩০ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে প্রশ্নের উত্তরে বলেন, "তারেক রহমানের ফেসবুক স্ট্যাটাসেই সব ব্যাখ্যা রয়েছে, আর এ বিষয়ে আর কিছু বলার নেই।" যদিও মি. আলমগীর বিষয়টি এভাবে এড়িয়ে গেলেও, দলের অন্যান্য সদস্যরা ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, তার দেশে ফেরার বিষয়ে রাজনৈতিক বাস্তবতার ভূমিকা রয়েছে। বিশেষ করে, বিএনপির পক্ষ থেকে এই বিষয়ে অতিরিক্ত আলোচনা না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে দলের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, "মায়ের অসুস্থতার মধ্যেও দেশে ফেরার বিষয়ে তাঁর সিদ্ধান্ত একক নয়, এবং এটি রাজনৈতিক বাস্তবতার ওপর নির্ভরশীল।" এ বিবৃতিতে তার দেশে ফেরার একমাত্র নিয়ন্ত্রক হিসাবে তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক এবং রাজনৈতিক প্রতিকূলতার কথা ইঙ্গিত করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটের প্রভাব:

বিশ্ব রাজনীতির প্রেক্ষাপটে তারেক রহমানের দেশে ফেরার এই অনিশ্চয়তার মধ্যে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা হতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। ২০০৭ সালে 'উইকিলিকস' এর মাধ্যমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে তারেক রহমানের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। বিশেষ করে, ভারতের সম্পর্ক এবং তাদের নীতি পরিবর্তন না হলে তারেক রহমান দেশে ফেরার সম্ভাবনা ক্ষীণ থাকতে পারে।

মহিউদ্দিন আহমেদ, একজন বিশ্লেষক, এই বিষয়টি নিয়ে বলেছেন, "উইকিলিকসের ফাঁস হওয়া প্রতিবেদনে তারেক রহমানের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি ছিল, এবং যদি ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের নীতির পরিবর্তন না হয়, তবে তারেক রহমান দেশে ফিরবেন কি না, তা নিয়ে নিশ্চিত হতে পারব না।"

রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং 'মাইনাস ফর্মুলা':

বাংলাদেশের রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরে দুই প্রধান দল—আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির মধ্যে সীমাবদ্ধ। তবে কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করছেন যে, রাজনৈতিক মহলে 'মাইনাস টু' বা 'মাইনাস ফোর' ফর্মুলার কথা এখন আবার আলোচনায় এসেছে। এই ধারণা ছিল যে, বাংলাদেশের দুই প্রধান দলের নেতৃত্বে পরিবর্তন আনার জন্য একটি অগণতান্ত্রিক প্রয়াস চালানো হচ্ছে। সজীব ওয়াজেদ জয়, শেখ হাসিনার ছেলে, তার এক বিবৃতিতে এমনটাই বলেছেন।

এই রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে, তারেক রহমানের দেশে ফেরার প্রসঙ্গও 'মাইনাস টু' ফর্মুলার সাথে যুক্ত হতে পারে বলে কিছু নেতা ইঙ্গিত করেছেন। এর মধ্যে বিএনপির এক নেতা বলেছেন, "দলের বিষয় রয়েছে, পাশাপাশি আরও অনেক বিষয় আছে, সব মিলিয়ে তার দেশে ফেরার বিলম্ব হচ্ছে।" তবে, মাইনাস ফর্মুলার পুরো প্রেক্ষাপট নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মত প্রকাশ করছেন যে, তারেক রহমানের দেশে ফেরার প্রশ্ন শুধুমাত্র তার নিজস্ব সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে না, বরং বড় আন্তর্জাতিক প্রতিকূলতার মধ্যে এটি একটি ন্যূনতম পরিবর্তন।

নিরাপত্তা এবং আইনি বাধা:

দীর্ঘদিন ধরে তারেক রহমান দেশে ফেরার পথে সবচেয়ে বড় বাধা হিসেবে যে বিষয়টি আলোচিত হয়ে আসছিল তা হলো আইনি এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তবে সম্প্রতি জানানো হয়েছে যে, তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জুবাইদা রহমান সকল আইনি মামলা থেকে মুক্তি পেয়েছেন। বিএনপি আরও জানিয়েছে যে, তারা দুইটি বুলেটপ্রুফ গাড়ি এবং অস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছে, যা তার দেশে ফিরে আসার জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।

এছাড়া, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া অনেক মামলা থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি আর আইনগতভাবে দেশে ফেরার ক্ষেত্রে বাধার মুখে নন।

শেষ কথা:

শেষ পর্যন্ত,


তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষটি শুধুমাত্র রাজনৈতিক নয়, একাধিক আন্তর্জাতিক ও আইনগত বিষয় দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে। তারেক রহমানের নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে যে কথাগুলি উঠে এসেছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে যে, তার দেশে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত একান্তই তার হাতে নেই এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে। বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে, পরিস্থিতি যাই হোক, তারেক রহমান দেশে ফিরবেন এবং নির্বাচনে নেতৃত্ব দেবেন।

এতথ্য নিয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা অপেক্ষা করছেন, এরই মধ্যে সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে যে, 'মাইনাস ফর্মুলা' আবারও বাস্তব রূপ ধারণ করতে পারে। তবে, এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় প্রশ্ন থাকছে—আসলে কে বা কারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারেক রহমান দেশে ফিরবেন কি না?

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

গিনি-বিসাউয়ে সামরিক হস্তক্ষেপ: প্রেসিডেন্ট ও নেতাদের আটক, নির্বাচনী পরিস্থিতি স্থগিত

এমটি কায়রোসে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা: কেমন আছেন বাংলাদেশি নাবিকরা?