ধর্মেন্দ্রর ৪০০ কোটি রুপির সাম্রাজ্য: দুই স্ত্রী ও ছয় সন্তানের মধ্যে কীভাবে ভাগ হবে এই বিশাল সম্পত্তি?
বলিউডের কিংবদন্তি অভিনেতা ধর্মেন্দ্র মাত্র কয়েকদিন আগেই ভক্তদের কাঁদিয়ে চলে গেছেন না-ফেরার দেশে। ৯০তম জন্মদিনের ঠিক আগমুহূর্তে তাঁর প্রস্থান বলিউড ইতিহাসে এক গভীর শূন্যতা তৈরি করেছে। তবে তাঁর মৃত্যু ঘিরে আরেকটি প্রশ্ন এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু—আনুমানিক ৪০০ থেকে ৪৫০ কোটি রুপি মূল্যের এই বিশাল সম্পত্তি কার ভাগে যাবে?
ধর্মেন্দ্র রেখে গেছেন দুই স্ত্রী—প্রকাশ কৌর এবং হেমা মালিনী,
এবং মোট ছয় সন্তান—
সানি দেওল, ববি দেওল, অজিতা দেওল, বিজেতা দেওল, এষা দেওল ও অহনা দেওল।
বলিউডের প্রথম সারির এই পরিবারের সম্পত্তি বণ্টন নিয়ে ভক্ত, আইনি বিশেষজ্ঞ এবং মিডিয়ার আগ্রহ স্বাভাবিকভাবেই তুঙ্গে।
ধর্মেন্দ্রর সম্পত্তির পরিমাণ কত?
উপস্থিত তথ্য অনুযায়ী তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ আনুমানিক ৪০০–৪৫০ কোটি রুপি। এই সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে—
১. মুম্বাইয়ের বিলাসবহুল বাংলো
মুম্বাইয়ের ব্যস্ত ও উচ্চমূল্যের এলাকায় অবস্থিত এই বাংলোই বহু বছর ধরে ধর্মেন্দ্রর স্থায়ী আবাস।
২. লোনাওয়ালার ১০০ একরের ফার্মহাউস
এই ফার্মহাউসটির সঙ্গে তাঁর আবেগ জড়িয়ে ছিল সবচেয়ে বেশি। জীবনের শেষ বছরগুলোতে তিনি এখানে চাষাবাদ, পশুপাখির যত্ন এবং প্রকৃতির সান্নিধ্যেই সময় কাটিয়েছেন।
এ ফার্মহাউসেই তিনি সাধারণ জীবনযাপনে সুখ খুঁজে পেয়েছিলেন।
৩. রিয়েল এস্টেট ও বিনিয়োগ
মোট ১৭ কোটি রুপির বেশি মূল্যের একাধিক আবাসিক ও বাণিজ্যিক সম্পত্তিতে তাঁর বিনিয়োগ রয়েছে।
৪. রেস্তোরাঁ ব্যবসা
-
জনপ্রিয় “গরম ধরম ধাবা” চেইন,
-
হরিয়ানায় অবস্থিত “হি ম্যান রেস্তোরাঁ”—
দুইটিই তাঁর সম্পদের বড় অংশ।
৫. গাড়ির সংগ্রহ
ধর্মেন্দ্রর কাছে ছিল একাধিক দামি গাড়ি, যেগুলোর বাজারমূল্য বিরাট।
৬. চলচ্চিত্র প্রযোজনা সংস্থা
বড় মেয়ে বিজেতা দেওলের নামে গড়া “বিজেতা ফিল্মস”-ও তাঁর সম্পদের আওতায়।
উইল বা লিখিত ঘোষণা ছিল কি?
ধর্মেন্দ্র তাঁর সম্পত্তি বণ্টন নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো উইল বা লিখিত নির্দেশ রেখে যাননি।
এটাই এখন সম্পত্তি ভাগের প্রক্রিয়াকে আরও জটিল করে তুলেছে।
যদি সত্যিই কোনো উইল না থেকে থাকে, তবে সম্পত্তি বণ্টনে ভারতের হিন্দু উত্তরাধিকার আইনই অনুসরণ করা হবে।
আইন কী বলছে? ছয় সন্তান কি সমান ভাগ পাবেন?
হিন্দু উত্তরাধিকার আইনে বলা আছে—
যদি কোনো পুরুষ উইল ছাড়া মারা যান, তবে তাঁর সম্পত্তি উত্তরাধিকার হিসেবে সন্তানেরা সমান ভাগে পাবেন।
তাহলে ধর্মেন্দ্রর ক্ষেত্রে—
৬ সন্তানের মধ্যে সমান ৬ ভাগে ভাগ হওয়ার সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি।
তবে বিষয়টি এত সরল নয়। কারণ এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে তাঁর দুই বিবাহ—প্রথমটি আইনত হিন্দু বিবাহ, দ্বিতীয়টি নিয়ে বিতর্ক আছে।
দুই স্ত্রীর অবস্থান: এখান থেকেই আইনি জটিলতার শুরু
প্রথম স্ত্রী – প্রকাশ কৌর
ধর্মেন্দ্রর প্রথম বিবাহ প্রকাশ কৌরের সঙ্গে। এই বিবাহ সম্পূর্ণ আইনত বৈধ এবং তাঁদের চার সন্তান—
সানি, ববি, অজিতা ও বিজেতা।
দ্বিতীয় স্ত্রী – হেমা মালিনী
হেমা মালিনীর সঙ্গে তাঁর বিবাহ নিয়ে বলিউডে বহুদিন ধরেই নানা আলোচনা আছে।
কিছু রিপোর্ট দাবি করে—
ধর্মেন্দ্র নাকি প্রথম বিবাহ বলবৎ থাকাবস্থায় হেমাকে বিয়ে করার জন্য ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন।
যেহেতু বিষয়টি নিজে ধর্মেন্দ্র বা পরিবার প্রকাশ্যে নিশ্চিত করেনি, আইনি অবস্থানও স্পষ্ট নয়।
এখানে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন—হেমা মালিনী কি সম্পত্তির আইনি অংশীদার?
আইনজীবীদের মতে—
-
যদি প্রথম বিবাহ কার্যকর এবং বাতিল না হয়ে থাকে,
-
এবং যদি ধর্মেন্দ্র হিন্দু আইনে হেমা মালিনীকে বিয়ে করে থাকেন,
তাহলে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে হেমার কোনো আইনি অধিকার থাকবে না হিন্দু আইনে উত্তরাধিকার হিসেবে।
এর বিপরীতে—
-
যদি তিনি ইসলাম গ্রহণ করে শরিয়াহ আইনে বিবাহ করে থাকেন,
-
এবং ইসলাম ধর্মে মৃত্যুর সময়ও তিনি থাকেন,
তাহলে পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারে।
তবে এখন পর্যন্ত কোনো তথ্যই আনুষ্ঠানিক নয়।
হেমা মালিনীর অবস্থান: তিনি নিজেই দাবি করেছেন যে সম্পত্তিতে তাঁর আগ্রহ নেই
২০২২ সালে এক সাক্ষাৎকারে হেমা মালিনী পরিষ্কারভাবে জানিয়েছিলেন—
“আমি কখনোই ধর্মেন্দ্রর সম্পত্তির অংশীদার হতে চাইনি।
আমি তার কাছ থেকে কিছুই চাইনি—শুধু ভালোবাসা।
সম্পত্তি বা টাকার কোনো প্রয়োজন আমার নেই।”
তাঁর এই বক্তব্য থেকে মনে করা হয়—
হেমা মালিনীর পক্ষ থেকে সম্পত্তিতে দাবি তোলা হবে না।
তাহলে কীভাবে সম্পত্তি ভাগ হবে? সম্ভাব্য চিত্র
বর্তমান পরিস্থিতিতে আইনি বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী—
১. যদি উইল না থাকে (সম্ভাবনা বেশি)
তাহলে উত্তরাধিকারে
👉 ৬ সন্তান সমান ভাগ পাবেন।
অর্থাৎ প্রত্যেকে পেতে পারেন আনুমানিক ৬৫–৭৫ কোটি রুপি মূল্যমানের সম্পত্তি।
২. যদি প্রথম বিবাহই একমাত্র আইনত বিবাহ হিসেবে গণ্য হয়
তাহলে—
👉 প্রকাশ কৌরেরও উত্তরাধিকারের অংশ পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
এক্ষেত্রে সম্পত্তি ভাগ আরও খুঁটিনাটিভাবে পুনর্গণনা হবে।
৩. যদি ধর্মান্তরের প্রমাণ থাকে (অনিশ্চিত)
তাহলে শরিয়াহ বা ধর্মান্তর সংক্রান্ত আইনি ধারা প্রযোজ্য হতে পারে—যা ভিন্ন সিদ্ধান্ত সৃষ্টি করবে।
৪. রিয়েল এস্টেট বনাম ব্যবসা–সম্পত্তির আলাদা মূল্যায়ন
বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, ফার্মহাউস ও বাংলো—সব সম্পত্তি আলাদা করে মূল্যায়ন করতে হবে।
এই মূল্যায়নের ওপরও ভাগের মান পরিবর্তিত হতে পারে।
পরিবারের অভ্যন্তরীণ সম্পর্ক: কোন পথে এগোতে পারে?
ধর্মেন্দ্রর পরিবার বলিউডে অন্যতম প্রভাবশালী ও ঐতিহ্যবাহী পরিবার।
বহু বছরের অভিজ্ঞতায় জানা যায়—
-
দেওল পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সম্পর্ক বেশ সুসম্পর্কপূর্ণ,
-
প্রকাশ কৌরের সন্তান ও হেমার সন্তানদের মধ্যে প্রকাশ্যে তেমন দ্বন্দ্ব দেখা যায়নি,
-
ধর্মেন্দ্র নিজে দুই পরিবারকে সবসময় আলাদা রেখেছিলেন সম্মান ও ব্যক্তিগত পরিসরের জন্য।
এসব বিবেচনায় মনে করা হচ্ছে—
বড় কোনো পারিবারিক বিরোধের সম্ভাবনা কম।
সম্পত্তির বণ্টন শুধু অর্থের বিষয় নয়, উত্তরাধিকারও
ধর্মেন্দ্র শুধু অর্থই রেখে যাননি—রেখে গেছেন উত্তরাধিকার, ঐতিহ্য এবং বলিউডে অমর অবদান।
তাঁর ছয় সন্তানের কাছেই রয়েছে—
-
অভিনয় সাম্রাজ্য,
-
ব্যবসা প্রতিষ্ঠান,
-
পরিবারের সম্মান,
-
তাঁর দীর্ঘ ক্যারিয়ারের স্মৃতি ও মূল্যবোধ।
সেই দৃষ্টিতে, তাঁর রেখে যাওয়া সম্পত্তি শুধু আর্থিক নয়;
এটি একটি পরিবার ও বলিউড ইতিহাসের অংশ।
শেষ কথা
ধর্মেন্দ্রর মৃত্যুর পর ৪০০–৪৫০ কোটি রুপির বিশাল সম্পত্তি কীভাবে ভাগ হবে—এ নিয়ে যত প্রশ্নই উঠুক,
আইন ও পারিবারিক সিদ্ধান্তই শেষ পর্যন্ত প্রভাব ফেলবে।
উইল না থাকলে ছয় সন্তানই সমান ভাগ পাবেন—এটাই সবচেয়ে স্বাভাবিক চিত্র।
তবে দুই স্ত্রীর আইনি অবস্থান বিষয়টিকে কিছুটা জটিল করতে পারে।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবার বা আইনজীবীরা আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে।
