দুই সন্তান রেখে কুয়েতে প্রেমিককে বিয়ে! দেশে ফিরে স্বামীর স্বীকৃতি চাইতে এসে বিপাকে রুমা আক্তার!


বাংলাদেশের ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার দক্ষিণ কয়রাটি গ্রামে গত শনিবার একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে, যা পুরো এলাকাতে আলোচনা সৃষ্টি করেছে। দুই সন্তানের মা, রুমা আক্তার (৩৬), যিনি দীর্ঘদিন ধরে কুয়েতে বসবাস করছিলেন, তিনি সেখানে পরিচিত হন এক যুবকের সঙ্গে, এবং পরে তাকে বিয়ে করেন। তবে এই বিয়ের পর, তার দেশে ফিরে আসা এবং স্বামীর স্বীকৃতির দাবিতে অবস্থান নেওয়ার ঘটনা গ্রামে বেশ তোলপাড় সৃষ্টি করেছে।

কুয়েতে রুমা আক্তারের নতুন জীবন: প্রেম এবং বিয়ে

রুমা আক্তার ময়মনসিংহ জেলার নরসিংদী সদরের চিনিসপুর ইউনিয়নের দাসপাড়া ঘোড়াদিয়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি দীর্ঘ সময় ধরে বিবাহিত জীবন কাটিয়েছেন এবং দুই সন্তানের মা। কিন্তু প্রায় দুই বছর আগে, রুমা আক্তার কুয়েতে চলে যান, যেখানে তিনি একটি হাসপাতালে সেবিকার কাজ শুরু করেন। কুয়েতে তার পরিচয় হয় নান্দাইলের রাজগাতি ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার হাবিবুর রহমানের ছেলে মো. নুর নবীর (৩০) সঙ্গে। কিছুদিন পর, রুমা তার প্রথম স্বামীকে তালাক দিয়ে নুর নবীর সাথে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন।

এ ঘটনায়, রুমা আক্তারের দ্বিতীয় বিয়েটি তার পরিবারের কাছে ছিল একটি বড় ধাক্কা, কারণ তাদের মধ্যে কোনো আলোচনা বা পূর্ব প্রস্তুতি ছিল না। কুয়েতে বসবাসরত রুমা আক্তারের জন্য তার প্রথম স্বামীর কাছে তালাকের মাধ্যমে নতুন জীবন শুরু করা এবং স্বপ্নের জীবন গড়ে তোলা ছিল একদম নতুন অধ্যায়। যদিও তাদের বিয়ে ভালভাবে চলছিল, তবে পরিবারের মধ্যে এই সম্পর্কের বিষয়ে গোপনীয়তা বজায় রাখা সম্ভব হয়নি।

তালাক এবং পরিবারিক বিরোধ

বিয়ের কিছুদিন পর, রুমার প্রথম স্বামী এবং তার পরিবার জানতে পারে যে, রুমা কুয়েতে গিয়ে তার প্রেমিককে বিয়ে করেছেন। এতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে এক ধরনের বিরোধ তৈরি হয় এবং রুমা তার স্বামীর পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। এমন পরিস্থিতিতে, রুমা দেশ ফিরে এসে তার নতুন জীবন এবং তার স্বামীর স্বীকৃতি পাওয়ার চেষ্টা করতে থাকেন।

রুমা ২২ নভেম্বর দেশে ফিরে আসেন এবং ২৭ নভেম্বর, তার মাকে সঙ্গে নিয়ে নান্দাইলের দক্ষিণ কয়রাটি গ্রামে চলে আসেন। সেখানে তিনি স্বামীর বাড়ির খোঁজ করেন এবং তার স্বীকৃতির দাবিতে স্থানীয় ইউপি সদস্যের কাছে গিয়ে আশ্রয় নেন। তবে, সেখানে পৌঁছানোর পর তিনি দেখতে পান যে, স্বামীর পরিবার তাকে অস্বীকার করেছে এবং তাকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

গ্রাম পুলিশ ও থানার হস্তক্ষেপ

রুমা আক্তারের অবস্থান নিয়ে এলাকায় তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এবং স্থানীয় গ্রাম পুলিশ ও থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। রুমা দাবি করছেন, তার দ্বিতীয় বিয়ে বৈধ এবং তিনি তার স্বামীকে ফিরে পাওয়ার জন্য স্বামীর পরিবারের কাছে স্বীকৃতির দাবিতে সেখানে অবস্থান করছেন। তবে স্বামীর পরিবার দাবি করছে, তাদের ছেলে বাড়িতে নেই এবং তার কোনো কিছু এখন আর তাদের কাছে নেই।

এদিকে, ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান জানান যে, রুমা আক্তার বিয়ের কাগজপত্র দেখালে তাকে তার শ্বশুরবাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, কিন্তু সেখানে তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপর শনিবার ফের ওই নারী ফের ওই বাড়িতে অবস্থান নিয়েছেন এবং স্বামীর স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য দাবি জানাচ্ছেন।

নারীর শ্বশুরের বক্তব্য

রুমার শ্বশুর, সাবেক মেম্বার হাবিবুর রহমান, জানিয়েছেন যে, তার ছেলের যদি বিয়ে হয়, তবে এটি তার ব্যক্তিগত বিষয়। তিনি আরও বলেন, “এখন ছেলে বাড়িতে নেই এবং তার কোনো সম্পত্তি নেই। তাই নারীর দাবি অযৌক্তিক।” যদিও তিনি স্বীকার করেছেন যে, রুমার এই দাবি তাদের জন্য অস্বাভাবিক এবং অন্যায্য।

থানার প্রতিক্রিয়া এবং পরবর্তী পদক্ষেপ

নান্দাইল থানার সহ-উপপরিদর্শক ঝুটন চন্দ্র সরকার জানান, রুমা আক্তারকে তার পরিবারের সঙ্গে থানায় আসার জন্য বলা হয়েছে এবং আইন অনুযায়ী পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে যে, বিষয়টি পুরোপুরি তদন্ত করা হবে এবং যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে সব পক্ষের কথা শোনা হবে।

আইনগত দৃষ্টিভঙ্গি

এ ঘটনা বাংলাদেশের নারীদের অধিকার এবং বৈধতা নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছে। যদি কোনো নারী বৈধভাবে তার স্বামীকে তালাক দেন এবং নতুন জীবন শুরু করেন, তাহলে তার প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হবে? পাশাপাশি, যদি তার পূর্ববর্তী স্বামী তার দ্বিতীয় বিয়েকে স্বীকৃতি না দেয়, তবে আইনি দিক থেকে সে কী ধরনের সহায়তা পাবে? এসব প্রশ্নের উত্তর ভবিষ্যতে এই মামলার রায় ও আইনি প্রক্রিয়ার ওপর নির্ভর করবে।

শেষ কথা

রুমা আক্তারের জীবনে একাধিক পরিবর্তন এবং সংগ্রাম ছিল, তবে তার এই ঘটনা বাংলাদেশের সমাজে নারী এবং সম্পর্কের ইস্যু নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠিয়েছে। নারীর অধিকার, সম্পর্কের বৈধতা এবং পরিবারিক সমর্থন না পাওয়ার মতো বিষয়গুলো সামাজিকভাবে আলোচিত হওয়া প্রয়োজন।

এই ঘটনাটি প্রমাণ করে, যেকোনো সম্পর্কের ভিতরের সংকটগুলি কেবলমাত্র পরিবার বা সমাজের মধ্যে নয়, আইনি কাঠামোর মধ্যে এসে ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

গিনি-বিসাউয়ে সামরিক হস্তক্ষেপ: প্রেসিডেন্ট ও নেতাদের আটক, নির্বাচনী পরিস্থিতি স্থগিত

এমটি কায়রোসে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা: কেমন আছেন বাংলাদেশি নাবিকরা?

তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারছেন না কেন? দেশের বাইরে থাকা নেতার আসল সত্য!