স্বামীর বিরুদ্ধে ‘অস্বাভাবিক আচরনের’ অভিযোগ—সেলিনা জেটলির বিস্ফোরক দাবি ও চলমান আইনি লড়াই


বলিউডের পরিচিত মুখ এবং সাবেক মিস ইন্ডিয়া সেলিনা জেটলি আবারও আলোচনায়। তবে এবার আলোচনার কেন্দ্রে তার কোনো নতুন ছবি বা গ্ল্যামারস ফটোশুট নয়; বরং স্বামী পিটার হাগের বিরুদ্ধে করা একাধিক গুরুতর অভিযোগ। ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, সেলিনার অভিযোগকে কেন্দ্র করে আদালতে এখন চলছে তাদের বিবাহবিচ্ছেদের মামলা, যেখানে উভয় পক্ষই নিজেদের দাবি পেশ করছেন।

২০১০ সালে অস্ট্রিয়ার নাগরিক ও হোটেল ব্যবসায়ী পিটার হাগকে বিয়ে করেন সেলিনা। একসময়ে সুখী দম্পতির ভাবমূর্তি বহন করা এই পরিবারে এখন চলছে অস্থিরতা, অভিযোগ-প্রতিযোগ ও আইনি লড়াই। ২০২৫ সালে এসে সেই সম্পর্ক তীব্রভাবে ভেঙে পড়েছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে আদালতের নথি।

সেলিনার অভিযোগ: ‘অস্বাভাবিক সম্পর্ক’ থেকে অপমান—বছরের পর বছর সহ্য করতে হয়েছে

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেলিনা জানান, তিনি অস্ট্রিয়ার বাড়ি থেকে পালিয়ে সন্তানদের নিয়ে ভারতে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন। আদালতে দাখিল করা আবেদনে তিনি দাবি করেন—

  • স্বামী তাকে অস্বাভাবিক যৌনতায় বাধ্য করতেন।

  • পায়ুপথে যৌনতা করতে চাপ দেওয়া হতো।

  • তার নগ্ন ছবি তুলে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করা হতো।

  • মানসিকভাবে অপমান করে ভেঙে দেওয়া হতো।

  • সন্তানদের সামনেও অশ্লীল ভাষায় হেনস্তা করা হতো।

সেলিনার কথায়, এটি কোনো একদিনের ঘটনা নয় বরং দীর্ঘ কয়েক বছরের দুঃসহ অভিজ্ঞতা।

আইনি নথি অনুযায়ী, অভিযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো তার ইতালিতে হানিমুনের সময় গুরুতর অসুস্থ থাকা অবস্থাতেও নাকি জোর করে যৌনসম্পর্কে বাধ্য করা হয়েছিল। এমনকি পিরিয়ডের তীব্র যন্ত্রণা থাকা সত্ত্বেও তাকে চিকিৎসার সুযোগ না দিয়ে অপমান করা হতো বলেও দাবি করেছেন তিনি।

অভিযোগগুলো আদালতে বিচারাধীন হওয়ায় এখনো সত্যতা বিচারাধীন অবস্থায় রয়েছে। আদালত প্রমাণ, সাক্ষ্য এবং শুনানির ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নেবে।

অন্য পুরুষদের সঙ্গে অস্বাভাবিক সম্পর্কে চাপ—আরও বিস্ফোরক দাবি

আদালতে দাখিল করা আবেদনে সেলিনা আরও দাবি করেছেন, স্বামী তাকে অন্য পুরুষদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে যেতে চাপ দিতেন। তার ভাষ্যমতে, সম্পর্কের নামে অমানবিক ও অস্বাভাবিক চাহিদা পূরণের জন্য তাকে ব্ল্যাকমেইল করা হতো।
এমন অভিযোগ বলিউড অঙ্গনে শোরগোল ফেলে দিয়েছে এবং অনেকেই বিষয়টি নিয়ে নিজেদের মত প্রকাশ করেছেন।

তবে বিচার প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই অভিযোগগুলোর সত্যতা আইনগতভাবে প্রমাণিত নয়—এটিও উল্লেখযোগ্য।

পরিবারের সামনে অপমান—সন্তানদের মনেও প্রভাব

সেলিনা এবং পিটার হাগের তিন সন্তান রয়েছে—২০১২ সালে জন্ম নেওয়া যমজ উইনস্টন ও ভিরাজ, এবং ২০১৭ সালে জন্ম নেওয়া আর্থার।

সেলিনা দাবি করেছেন, তাদের উপস্থিতিতেও তাকে অপমান করা হতো, যা সন্তাদের মানসিক অবস্থাতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। সন্তানদের মানসিক স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করেই তিনি নাকি অস্ট্রিয়া ছেড়ে ভারতে ফিরে এসেছেন।

তার ভাষায়—“এভাবে চলতে থাকলে আমার সন্তানরাও মানসিকভাবে ভেঙে পড়ত। তাই নিজের সুরক্ষা নয়, ওদের ভবিষ্যতের জন্যই এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।”

চলছে আইনি লড়াই: আদালতের পরবর্তী সিদ্ধান্ত এখন গুরুত্বপূর্ণ

২৫ নভেম্বর আদালতে শুনানি হয় এবং আদালত পিটার হাগের বিরুদ্ধে নোটিশ জারি করে। পরবর্তী শুনানির তারিখ ১২ ডিসেম্বর নির্ধারিত হয়েছে।
সেলিনা আদালতে জানিয়েছেন, তিনি ৫০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ এবং মাসিক ১০ লাখ টাকা রক্ষণাবেক্ষণ দাবি করেছেন।

অপরদিকে, জানা গেছে পিটার হাগ ২০২৫ সালের আগস্টেই অস্ট্রিয়ার আদালতে প্রথম বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেছিলেন। উভয় পক্ষের বক্তব্য আদালতে বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে।
এই মামলার রায় দুই পক্ষের ভবিষ্যতের দিক নির্ধারণ করবে।

বলিউডে প্রতিক্রিয়া: সমর্থন ও সতর্কতা

বিষয়টি সামনে আসার পর বলিউডের অনেক তারকা নীরব থাকলেও কয়েকজন সোশ্যাল মিডিয়ায় সেলিনার প্রতি সহানুভূতি জানিয়েছেন।
তবে মামলাটি আদালতে বিচারাধীন থাকায় অনেকেই মন্তব্য করা থেকে বিরত রয়েছেন। বলিউড অঙ্গন বরাবরই ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়ে মন্তব্যে সাবধানী।

নারী অধিকার সংগঠনগুলোর একটি অংশ অবশ্য বলছে—যদি অভিযোগ সত্য হয়, তবে এটি ভয়াবহ মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের উদাহরণ। তারা মামলার স্বচ্ছ তদন্ত ও দ্রুত বিচার দাবি করেছে।

সেলিনার ক্যারিয়ার: আলো, গ্ল্যামার এবং কঠিন বাস্তবতা

সেলিনা জেটলি একসময় বলিউডে অন্যতম জনপ্রিয় মুখ ছিলেন। ‘নো এন্ট্রি’, ‘টম ডিক অ্যান্ড হ্যারি’, ‘জেল কেট’–এর মতো চলচ্চিত্রে অভিনয় করে তিনি দর্শকদের নজর কাড়েন।
ক্যারিয়ারের চূড়ায় থাকা অবস্থায়ই তিনি পিটার হাগকে বিয়ে করেন। এরপর ধীরে ধীরে অভিনয়জগৎ থেকে দূরে সরে গিয়ে পরিবার নিয়ে অস্ট্রিয়ায় স্থায়ী হন।

এখন তিনি বলছেন—“আমার জীবনের এক পর্যায়ে সবকিছু ভেঙে পড়েছিল। কিন্তু আমি আবার ঘুরে দাঁড়াতে চাই।”

আইনি বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন?

আইন বিশেষজ্ঞদের মতে,

  • সেলিনার অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে এটি ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।

  • অপরদিকে, প্রতিপক্ষ যদি অভিযোগ অস্বীকার করে, তাহলে আদালতকে উভয়ের সাক্ষ্য, চিকিৎসা নথি, ডিজিটাল প্রমাণসহ সবকিছু যাচাই করতে হবে।

  • রক্ষণাবেক্ষণ ও ক্ষতিপূরণ নির্ভর করবে উভয়ের আর্থিক অবস্থা এবং প্রমাণিত অভিযোগের ওপর।

মামলাটি জটিল এবং সময়সাপেক্ষ হওয়া স্বাভাবিক।

শেষকথা: বিচারাধীন মামলার সিদ্ধান্তই বলে দেবে সত্য

সেলিনা জেটলি তার অভিজ্ঞতা প্রকাশ করায় বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে। তবে এখনো এটি একটি বিচারাধীন মামলা—তাই অভিযোগগুলোর চূড়ান্ত সত্যতা আদালতই নির্ধারণ করবে।
যাই হোক, বলিউডের এই আলোচিত দম্পতির সম্পর্ক কোন দিকে মোড় নেয়, সেটিই এখন দেখার অপেক্ষা।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

গিনি-বিসাউয়ে সামরিক হস্তক্ষেপ: প্রেসিডেন্ট ও নেতাদের আটক, নির্বাচনী পরিস্থিতি স্থগিত

এমটি কায়রোসে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা: কেমন আছেন বাংলাদেশি নাবিকরা?

তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারছেন না কেন? দেশের বাইরে থাকা নেতার আসল সত্য!