টিকটকে পরকীয়া প্রেম, ৬ বছরের শিশুকে রেখে পালালো মা: একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা


মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার কবিরাজপুর ইউনিয়নের চাঁনপট্টি গ্রামে ঘটে যাওয়া একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। টিকটকে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে, একটি ছোট্ট শিশুকে ছেড়ে চলে গেছেন তার মা। এই ঘটনা শুধু পরিবারের জন্য নয়, পুরো সমাজের জন্য একটি বড় প্রশ্ন তৈরি করেছে। এমন অমানবিক ঘটনা সত্যিই ভাবিয়ে তোলে আমাদের সমাজের মূল্যবোধ এবং নৈতিকতার দিকে।

মায়ের পরকীয়ায় শিশুটি একা

শিশু মোহাম্মদ বায়েজিদ (৬) কে তার মায়ের আদর, যত্ন ও ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হওয়া, মর্মান্তিক। ঘটনাটি ঘটে রাজৈর উপজেলার চাঁনপট্টি গ্রামে, যেখানে রতনা বেগম নামের এক নারী তার ৬ বছরের ছেলেকে ছেড়ে চলে যান। টিকটক ব্যবহারের মাধ্যমে, রতনা পরকীয়া সম্পর্ক স্থাপন করেন এক যুবক শুভঙ্কর নামের একজনের সঙ্গে, যিনি চাপাইনবাবগঞ্জ জেলার বাসিন্দা। এটি ছিল একটি দূরবর্তী প্রেম, তবে তা এতটাই গভীর হয়ে ওঠে যে, রতনা তার পরিবার এবং সন্তানের সবকিছু ছেড়ে চলে যান।

শিশু বায়েজিদ, যার বয়স মাত্র ৬ বছর, নিজের মুখে জানিয়েছে, “আমার মা পঁচা। এক বেডার সাথে দিন-রাত কথা বলে। আমাকে কোনো আদর করে না। ফোন আসলেই ঘরের বাহিরে চলে যেত।” এমন অমানবিক ব্যবহার তার ছোট্ট মনকে চিরতরে আঘাত করেছে।

রতনা বেগমের পরকীয়া প্রেমের গল্প

এখানে সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, যে রতনা বেগম তার পরিবারকে রেখে, একজন অপরিচিত পুরুষের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করেছেন, তা শুধু তার স্বামী ফরিদ মাতুব্বর এবং শিশু বায়েজিদের জন্যই নয়, পুরো সমাজের জন্য একটি বড় বিপদের ইঙ্গিত। রতনার স্বামী ফরিদ মাতুব্বর দীর্ঘদিন ধরে কুমিল্লায় চাদরের ব্যবসা করছিলেন। কিন্তু এই সময়ে, তার স্ত্রীর টিকটকে পরিচয় ঘটে শুভঙ্কর নামক এক যুবকের সাথে। দু'জনের মধ্যে গভীর প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়, যার কারণে রতনা তার স্বামী ফরিদকে ছাড়তে শুরু করেন।

ফরিদ জানতেন না যে, তার স্ত্রী এমন একটি সম্পর্ক স্থাপন করেছেন। একদিন তার ছেলেই, বায়েজিদ, তার বাবাকে জানায় যে, মা ফোনে একজন যুবকের সঙ্গে কথা বলে এবং তাকে নিয়ে খুশি থাকে। এটা ছিল ফরিদের জন্য একটি বড় ধাক্কা। তিনি বিষয়টি সমাধান করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেন, কিন্তু পরিণতি ছিল তার স্ত্রীর পলায়ন।

তালাক এবং পরিণতি

রতনার পরকীয়ায় একদিকে যেমন তার পারিবারিক সম্পর্ক ভেঙে গেছে, অন্যদিকে তার ৬ বছরের সন্তানকে একা রেখে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত পুরো সমাজকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে। ফরিদ মাতুব্বর জানান, “আমি টিকটক চালাতে দেখে কখনো কিছু বলিনি, কিন্তু জানতাম না যে, শুভঙ্করের সঙ্গে তার প্রেম এত গভীর হয়ে যাবে। আমি বহু চেষ্টা করেছি, কিন্তু একতরফা তালাক দিয়ে আমার স্ত্রী আমাকে বিদায় জানিয়ে চলে গেছে। এখন সে তার প্রেমিকের কাছে চলে গেছে এবং ছোট্ট বায়েজিদও তার মায়ের আদর থেকে বঞ্চিত।”

এটা ছিল শুধু একটি দাম্পত্য জীবনের অবসান নয়, একেবারে মানবিকতা ও দায়িত্ববোধের অবমূল্যায়ন। মায়ের প্রতি শিশুর সবচেয়ে গহীন ভালোবাসা, তার থেকে নেওয়া যায় কিভাবে? রতনা বেগমের সিদ্ধান্তে না শুধু তার পরিবারের ভেঙে যাওয়ার শোক, বরং পুরো সমাজের জন্য এটি একটি বিপজ্জনক উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সমাজবিজ্ঞানী এবং সংস্কৃতি গবেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি

মাদারীপুরের লোকসংস্কৃতি ও ইতিহাস গবেষক সুবল বিশ্বাস বলেন, "বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া এবং বিশেষত টিকটক, তরুণ-তরুণীদের জীবনে একটি বিপজ্জনক প্রবণতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মাধ্যমে পরকীয়া, অশ্লীলতা এবং সম্পর্কের অবক্ষয় ঘটছে, যা আমাদের সমাজের জন্য মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে। যদি এর প্রতিরোধ করা না হয়, তবে ভবিষ্যতে এর ফলাফল ভয়াবহ হবে।"

তিনি আরও বলেন, "যে নারী তার ৬ বছরের শিশুকে ছেড়ে চলে যেতে পারে, তাকে কি ভালো মা বলা যায়? এটি একটি সামাজিক ব্যাধি যা যত দ্রুত সম্ভব সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করে প্রতিরোধ করতে হবে।"

আইনি পদক্ষেপ এবং পরবর্তী কার্যক্রম

এ ঘটনায় এখনও থানায় কোনো অভিযোগ জমা পড়েনি। তবে, রাজৈর থানার ওসি মাসুদ খান জানান, "এ ঘটনার বিষয়ে যদি কোনো অভিযোগ আসে, তবে আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।" পুলিশের মন্তব্য এই পরিস্থিতিতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার গুরুত্ব তুলে ধরে। শিশুটির ভবিষ্যত এবং মায়ের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে আইনিভাবে বিচার করা প্রয়োজন।

শেষ কথা: পরকীয়া এবং তার পরিণতি

এই ঘটনার মাধ্যমে, আমাদের সমাজে যে সামাজিক সমস্যা এবং নৈতিক অবক্ষয় চলছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। পরকীয়ার কারণে পরিবারের ভাঙন এবং শিশুদের মনোবল ভেঙে যাওয়ার ঘটনা শুধুমাত্র একটি দাম্পত্য জীবনের সংকট নয়, এটি সমাজের একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের উচিত এই সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি করা।

শিশু বায়েজিদ এখন তার মায়ের অভাব অনুভব করছে। তাকে মায়ের আদর, ভালোবাসা ও যত্ন থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। সমাজের দায়িত্ব, এরকম পরিস্থিতিতে তার মতো শিশুর ভবিষ্যৎ নিরাপদ করা।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

গিনি-বিসাউয়ে সামরিক হস্তক্ষেপ: প্রেসিডেন্ট ও নেতাদের আটক, নির্বাচনী পরিস্থিতি স্থগিত

এমটি কায়রোসে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা: কেমন আছেন বাংলাদেশি নাবিকরা?

তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারছেন না কেন? দেশের বাইরে থাকা নেতার আসল সত্য!