তেজস বিধ্বস্ত — আরমেনিয়ার অর্ডার স্থগিত!, ভারতের রপ্তানি স্বপ্ন থমকে


২০২৫ সালের ২১ নভেম্বর, দুবাই এয়ারশোতে অনুষ্ঠিত এক প্রদর্শনী ফ্লাইটে হঠাৎ ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনায় বিধ্বস্ত হয়ে যায় ভারতের তৈরি তেজস যুদ্ধবিমান। বিমানটি মাটিতে বিধ্বস্ত হয়ে আগুনে দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে; পাইলট হিসেবে লড়াই করতে থাকা Namansh Sial প্রাণ হারান।

এই দুর্ঘটনার মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই, যে দেশে তেজস রফতানির সম্ভাবনা brightest ছিল, সেখানে নেগোশিয়েশন স্থগিত হওয়ার খবর আসে — ইতিমধ্যেই Hindustan Aeronautics Limited (HAL) ও ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, Tejas Mk‑1A–র রফতানি পরিকল্পনায় এখন একটা বড় ধাক্কা লাগেছে। 

নিচে জানা যাচ্ছে কেন তেজস রফতানি এবং আর্মেনিয়ার কেনাকাটার আলোচনা স্থগিত হলো — এবং তেজস প্রজেক্ট এখন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে।

কেন ছিল আর্মেনিয়া — চুক্তির পটভূমি

আর্মেনিয়া দীর্ঘ সময় ধরে তার বায়ুবাহিনী আধুনিক করার চেষ্টায় রয়েছে। ঐতিহ্যগত এবং পুরনো সোভিয়েত-যুগীয় বিমানগুলোর পরিবর্তে, নতুন এবং কম-খরচে সক্ষম যুদ্ধবিমান খুঁজছিল তারা। তেজস Mk-1A–র হালকা কমব্যাট ভ্যারিয়েন্ট, যার উৎপাদন ও উন্নয়ন করেছে HAL, ছিল একটি সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী। 

আর্মেনিয়া ও HAL-এর মধ্যেকার চুক্তি প্রাথমিকভাবে ১২টি যুযুধান বিমান (estimated value ~1.2 billion USD) ক্রয় নিয়ে আলোচনা চলছিল। এটি হতো তেজসের প্রথম বড় রফতানি—যা ভারতের প্রতিরক্ষা রফতানায় বড় মাইলস্টোন হিসেবে ধরা হচ্ছিল। 

দুর্ঘটনা হলো – আর সব পরিকল্পনা বদলে গেল

কিন্তু ২০২৫ সালের নভেম্বরে দুবাই এয়ারশোতে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার প্রতিক্রিয়া ছিল তৎক্ষণিক। তেজস যেভাবে বিধ্বস্ত হলো, তাতে বিশ্ব প্রতিরক্ষা বাজার, সম্ভাব্য ক্রেতারা এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গন সবদিকে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে, প্রাইভেট ক্রেতারা যখন নিরাপত্তা, নির্ভরযোগ্যতা ও ফ্লাইট রেকর্ড দেখে তখন এমন দুর্ঘটনা তাদের বিশ্বাসে ধাক্কা দিতে পারে।

এই কারণেই, আর্মেনিয়া — যাদের জন্য প্রথমবার তেজস কেনা হতে পারত — তারা নেগোশিয়েশন তৎক্ষণাৎ স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। 

কিছু বিশ্লেষক বলছেন, শুধুই দুর্ঘটনা নয় — তেজস Mk-1A ভ্যারিয়েন্টের ফ্লাইট-নির্ভরযোগ্যতা, নতুন প্রযুক্তি, এবং যুদ্ধক্ষেত্রে প্রয়োজ্য সীমাবদ্ধতা এই সিদ্ধান্তের পিছনে কাজ করেছে। 

তেজস: ইতিহাস, উপযোগিতা এবং এখনকার চ্যালেঞ্জ

তেজস প্রথম তৈরি শুরু হয়েছিল ১৯৮২ সালে, পুরনো এবং যন্ত¯্রনা-গ্রস্ত MiG-21–এর স্থলাভিষিক্ত হিসেবে। HAL-এর তৈরি এই হালকা কমব্যাট বিমান, মূলত মধ্যবিত্ত দেশগুলোর চাহিদা মেটাতে ডিজাইন করা হয়েছিল—যেখানে উচ্চ-প্রদর্শন, কম খরচে সক্ষমতা, এবং রক্ষণাবেক্ষণের সহজতা জরুরি। 

বর্তমানে তেজস Mk-1A–র উন্নত সংস্করণ তৈরি হচ্ছে। এতে রয়েছে উন্নত অ্যাভিয়নিক্স, ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার সিস্টেম এবং আরও আধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র অপশন। 

কিন্তু ২১ নভেম্বরের দুর্ঘটনা—যেখানে একটি প্রদর্শনী ফ্লাইটেই তেজস বিধ্বস্ত হয়েছে—তেজস প্রজেক্টের জন্য বড় প্রশ্ন তোলে:

  • উইং কমান্ডারসহ পাইলট নিহত — বর্তমান নিরাপত্তা এবং ঝুঁকি মূল্যায়নে বড় ধাঁধাঁ। 

  • সম্ভাব্য রফতানিকারক দেশ এবং আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের কাছে তেজসের বিশ্বাসযোগ্যতা চ্যালেঞ্জে।

  • তেজস রফতানি প্রোগ্রামের জন্য প্রথম সম্ভাব্য চুক্তি এখন অনিশ্চিত।

এসব কারণে, বিমানপ্রেমী, নিরাপত্তা বিশ্লেষক এবং প্রতিরক্ষা বাজার সবাই এখন তেজসকে দৃষ্টিতে রেখেছে — একটি “রহস্য + ঝুঁকি”–ভর্তি প্রজেক্ট হিসেবে।

পরবর্তী করণীয়: HAL এবং ভারতের প্রতিরক্ষা শিল্পের সামনে

এখন HAL এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জন্য জরুরি:

  • দুর্ঘটনার কারণ দ্রুত এবং স্বচ্ছভাবে নির্ধারণ করা।

  • তেজস Mk-1A–র ফ্লাইট-নির্ভরযোগ্যতা ও নিরাপত্তা নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্বাসযোগ্যতা পুনরুদ্ধার।

  • উন্নত রক্ষণাবেক্ষণ, পাইলট প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত আপগ্রেড — যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা প্রতিরোধ করা যায়।

  • সম্ভাব্য রফতানিদার দেশগুলোর সঙ্গে খোলামেলা আলোচনায় যাওয়া, এবং পুনরায় তাদের আস্থা অর্জন।

তেজস রফতানি যেন এক প্রজেক্ট থেকেই ভারতের প্রতিরক্ষা রপ্তানির প্রতীক হয়ে দাঁড়াতে পারে — এই লক্ষ্যে এখন কাজ শুরু করা জরুরি।

কি হবে ভবিষ্যতে?

যদি HAL এবং সংশ্লিষ্টরা দ্রুত এবং সফলভাবে ত্রুটি শনাক্ত করে নিরাপত্তা বাড়াতে পারে, তেজস–রফতানির স্বপ্ন পুনরায় জীবিত হতে পারে। কিন্তু যদি নিরাপত্তার বিষয়ে সঙ্কোচ থেকে যায়, তাহলে তেজস হয়তো আবার বিশাল প্রতিযোগিতার পেছনে হারিয়ে যাবে।

অন্যদিকে আর্মেনিয়া বা অন্য কোনো দেশ যদি রিলায়েবল বিকল্প শোনে, তখন তেজস রপ্তানির আশা ধুয়ে যাবে।

সংক্ষেপে: ২১ নভেম্বরের দুর্ঘটনা শুধু একটি বিমান বিধ্বস্ত নয় — এটি তেজস প্রজেক্ট, ভারতের প্রতিরক্ষা রপ্তানি এবং ভবিষ্যতের আন্তর্জাতিক চুক্তির উপর এক বিশাল প্রশ্নচিহ্ন ফেলে দিয়েছে।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

গিনি-বিসাউয়ে সামরিক হস্তক্ষেপ: প্রেসিডেন্ট ও নেতাদের আটক, নির্বাচনী পরিস্থিতি স্থগিত

এমটি কায়রোসে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা: কেমন আছেন বাংলাদেশি নাবিকরা?

তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারছেন না কেন? দেশের বাইরে থাকা নেতার আসল সত্য!