আমগাছে পরী সদৃশ্য প্রাণীর উপস্থিতি! সিরাজগঞ্জে রহস্যময় ঘটনার ছবিতে উত্তাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম


সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় সাম্প্রতিক রাতে ঘটে যাওয়া এক রহস্যময় ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুরো অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে তীব্র কৌতূহল, আলোচনা আর বিভ্রান্তি। রবিবার রাত ১১টার দিকে বড়পাঙ্গাসী ইউনিয়নের ছয়পাড়া গ্রামে আমগাছের ডালে দেখা মিলেছে এক পরী সদৃশ্য পাখাওয়ালা প্রাণী, এমন দাবি করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা মাসুদ কবির। তাঁর তোলা তিনটি ছবিও মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে।

ঘটনার পর গ্রামজুড়ে আলোড়ন, কেউ বলছেন এটি অলৌকিক, কেউ বলছেন ভুল দেখেছেন তিনি, আবার কেউ বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার চেষ্টা করছেন। তবে যাই হোক, এই ঘটনার আকস্মিক আবির্ভাব সাধারণ মানুষের মধ্যে তৈরি করেছে এক ধরনের রহস্যময় উত্তেজনা।

রাতের আঁধারে চোখে ধরা ‘অস্বাভাবিক আলো’

মাসুদ কবির জানিয়েছেন, তিনি নিয়মিত কাজ শেষে বাড়ি ফিরছিলেন। পথিমধ্যে স্থানীয়ভাবে পরিত্যক্ত বলা হয় এমন একটি পুরনো বাড়ি—“তালুকদারবাড়ির” পাশে পৌঁছালে তিনি হঠাৎ আমগাছের ডগায় দেখতে পান এক ধরনের অস্বাভাবিক আলো।

প্রথমে মনে হয়েছিল টর্চের বা মোবাইলের আলো। কিন্তু আলো যখন এক জায়গায় স্থির থেকে ঝলমল করতে থাকে, তখন কৌতূহল বাড়ে তাঁর। চোখ তুলে তাকাতেই দেখতে পান গাছের ওপরে দাঁড়িয়ে আছে একটি পাখাওয়ালা, মানুষের মতো আকৃতির অবয়ব!

মাসুদ দাবি করেন—

“এটি সাধারণ কোনো প্রাণী নয়। এর ডানার মতো অংশ ছিল এবং শরীর থেকে আলো বের হচ্ছিল।”

তিনটি ছবি—ভাইরাল হওয়ার পর শুরু হল বিতর্ক

সাহস সঞ্চয় করে তিনি দ্রুতই মোবাইল ফোনে তিনটি ছবি তোলেন। মুহূর্তেই প্রাণীটি অদৃশ্য হয়ে যায়। পরের দিন ছবিগুলো ফেসবুকে পোস্ট করতেই হাজার হাজার মানুষ তা শেয়ার করেন।

ছবিতে দেখা যায়—

  • অন্ধকারের মধ্যে আলোর মতো কিছু

  • গাছের ডগায় মানবসদৃশ একটি ছায়া

  • এবং এক ধরনের অস্পষ্ট উজ্জ্বলতা

যদিও ছবির স্পষ্টতা কম, কিন্তু ঝাপসা দৃশ্যই রহস্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

পোস্টের ক্যাপশনে মাসুদ লেখেন—
“আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর মেহেরবানিতে পরীর দেখা পেলাম!”

এই এক লাইনেই পোস্টটি মুহূর্তে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ভাইরাল হয়ে যায়।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত আরেকজনের বক্তব্য

ঘটনার সময় মাসুদের সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় যুবক নাইম ইসলাম।
তিনি বলেন—

“আমি আলো দেখেছি। মোবাইলের ছবিও দেখেছি। তবে প্রাণীটিকে চোখে দেখিনি। কিন্তু আলোটা অস্বাভাবিক ছিল, সেটা নিশ্চিত।”

তার এই বক্তব্য আরও বিভ্রান্তি বাড়িয়েছে।
কেউ বলছেন—এটি কোনো কীটপতঙ্গ বা উড়ন্ত পোকা থেকেও হতে পারে।
আবার কেউ বলছেন—প্রকৃত কোনো অজানা প্রজাতির প্রাণীও হতে পারে।

স্থানীয়দের কৌতূহল—এটি কি সত্যিই পরী?

গ্রামজুড়ে এখন একটাই প্রশ্ন—
“উল্লাপাড়ায় কি সত্যিই পরীর দেখা মিলল?”

গ্রামের বয়স্ক ব্যক্তিদের কেউ কেউ বলছেন—
আগে কখনো এমন ঘটনা শোনা যায়নি।

যুবকদের মধ্যে কেউ মনে করছেন—পরিত্যক্ত বাড়ির জন্য এমন অলৌকিক কিছু ঘটতে পারে।
আবার অন্যরা বলছেন—এটি হয়তো—

  • আলো প্রতিফলনের ভুল

  • কোনো বন্য পাখির ছায়া

  • মোবাইল ক্যামেরার লেন্স ফ্লেয়ার

  • অথবা মানুষের চোখের বিভ্রম

অন্যদিকে ইসলাম ধর্মে পরী বা ফেরেশতা বিষয়টি আস্থা ও বিশ্বাসের সঙ্গে যুক্ত হলেও ধর্মীয় বিদ্বানরা বলছেন—ফেরেশতা সাধারণ মানুষের চোখে ধরা পড়ে না। তাই এই দৃশ্যকে ‘পরী দেখা’ বলা ভুলও হতে পারে।

বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার সম্ভাবনা

বিজ্ঞান অনুসারে রাতের আঁধারে গাছে দেখা আলো বা ছায়া হতে পারে—

১. লেন্স ফ্লেয়ার

মোবাইল ক্যামেরার লেন্সে আশপাশের আলো প্রতিফলিত হয়ে ভিন্ন আকৃতির ছবি তৈরি করতে পারে।

২. বায়োলুমিনেসেন্ট পোকা

কিছু ধরনের জোনাকি বা আলোকময় পোকা গাছে থাকলে অস্বাভাবিক আলো তৈরির সম্ভাবনা থাকে।

৩. পেঁচা বা নিশাচর পাখির উপস্থিতি

নিশাচর পাখির চোখে আলো পড়লে তা আলোকিত দেখা যায়।

৪. অপটিক্যাল ইলিউশন

রাতে অন্ধকারে মানুষের চোখ অনেক সময় আকৃতিকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে।

৫. কুয়াশা বা আদ্রতার প্রতিফলন

আলোকিত কণা গাছের ওপর ভিন্ন আকারের প্রতিচ্ছবি তৈরি করতে পারে।

তবে এসব বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও এখনো স্থানীয়দের কৌতূহল কমাতে পারেনি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উত্তাল আলোচনা

মাসুদের ছবি পোস্ট হওয়ার পর ফেসবুক, টিকটক, ইউটিউব—সব জায়গায়ই আলোচনা শুরু হয়।
কেউ বলছেন—

  • “এটি জ্বিন বা পরীর মতো কিছু!”

  • “এলার্জি নয়, অদৃশ্য জগতের বার্তা।”

  • “এমন দৃশ্য চরম বিরল, আল্লাহর বিশেষ ইশারা।”

অন্যদিকে অন্যরা বলছেন—

  • “ছবি এডিট করা।”

  • “মোবাইল ক্যামেরার ভুল।”

  • “ভয় তৈরি করে ভাইরাল হওয়ার চেষ্টা।”

অধিকাংশেই ছবির স্পষ্টতা আরও বাড়ানোর অনুরোধ করেছেন।

এলাকার ভাবনা—ভয় নাকি আগ্রহ?

গ্রামের অনেকেই ঘটনাস্থলে ছুটে যান।
কেউ ভিডিও করতে চান,
কেউ জৈবিক ব্যাখ্যা খুঁজছেন,
আবার কেউ এই পরিত্যক্ত বাড়িটিকে এখন রহস্যময় হিসেবে দাবি করছেন।

একজন স্থানীয় বলেন—

“তালুকদারবাড়ি অনেক বছর ধরে জনমানবশূন্য। এমন কিছু ঘটলে ভয় পাওয়াই স্বাভাবিক।”

অন্যজন বলেন—

“এটা পরী নয়। নিশ্চয়ই কোনো পোকা বা পাখি।”

স্থানীয় প্রশাসন বা বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য কী?

এখন পর্যন্ত প্রশাসন কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেয়নি।
তবে স্থানীয় শিক্ষক, কলেজ ছাত্র, এমনকি কয়েকজন শৌখিন ফটোগ্রাফার ছবি বিশ্লেষণ করে বলছেন—

  • আলোর উৎসটি প্রাকৃতিক নয়

  • কিন্তু এটি কোনো জৈবিক প্রাণীর ছায়াও হতে পারে

  • ছবির গুণগত মান কম হওয়ায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেওয়া সম্ভব নয়

তবে কেউ কেউ বলছেন, আরও স্পষ্ট ছবি বা ভিডিও ছাড়া বিষয়টি নিশ্চিত করা যাবে না।

মানুষের সহজ বিশ্বাস ও রহস্যপ্রবণ মন—এমন ঘটনার কারণ কী?

মনোবিজ্ঞান বলছে—
অন্ধকার, নীরবতা এবং অজানা কিছুর উপস্থিতি মানুষকে সহজেই বিভ্রমে ফেলে।
মানুষের মস্তিষ্ক অনেক সময়—

  • ছায়াকে প্রাণী,

  • আলোকে জৈবিক উৎস,

  • আর অস্পষ্ট অবয়বকে মানুষ বা পরী হিসেবে ব্যাখ্যা করে।

এই স্বাভাবিক প্রবণতাকেই “প্যারাইডোলিয়া” বলা হয়।

ফলে অনেক সময় চোখ যা দেখে, তা আসলে বাস্তব নয়।

শেষ কথা: রহস্যের উত্তর কি মিলবে?

সিরাজগঞ্জের এই ঘটনাটি এখনো রহস্যে ঢাকা।
মাসুদ কবির ও তাঁর সঙ্গী আলো দেখেছেন, ছবি তুলেছেন—
কিন্তু সেই প্রাণীটি কি সত্যিই পরী সদৃশ্য কোনো অস্তিত্ব?
নাকি প্রকৃতিগত বা প্রযুক্তিগত কারণে তৈরী একটি ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট?

সত্যিই কি উল্লাপাড়ার আমগাছে পরী নেমে এসেছিল?
নাকি এটি মানুষের স্বাভাবিক ভীতি, কৌতূহল আর আলো-ছায়ার খেলাই এক নতুন গল্প তৈরি করেছে?

এই প্রশ্নের উত্তর আপাতত অজানাই রয়ে গেছে।
তবে ঘটনাটি যে সিরাজগঞ্জবাসীর আলোচনা, কল্পনা আর কৌতূহলে ঝড় তুলেছে—
তা বলাই বাহুল্য।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

গিনি-বিসাউয়ে সামরিক হস্তক্ষেপ: প্রেসিডেন্ট ও নেতাদের আটক, নির্বাচনী পরিস্থিতি স্থগিত

এমটি কায়রোসে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা: কেমন আছেন বাংলাদেশি নাবিকরা?

তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারছেন না কেন? দেশের বাইরে থাকা নেতার আসল সত্য!