ইমরান খান সেনাপ্রধান অসীম মুনিরকে ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ বললেন: পাকিস্তানে নতুন রাজনৈতিক উত্তেজনা
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান আবারও আলোচনায় এসেছেন তার বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে। এবার, তিনি পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল অসীম মুনিরকে ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ আখ্যা দিয়েছেন, যা পাকিস্তানের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। এই মন্তব্যে তিনি তার দেশের বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং মুনিরের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র অভিযোগ তুলেছেন।
ইমরান খানের বিস্ফোরক মন্তব্য
৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ তারিখে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান মাইক্রোব্লগিং সাইট ‘এক্স’-এ (যা পূর্বে টুইটার নামে পরিচিত ছিল) একটি পোস্ট করে সেনাপ্রধান অসীম মুনিরের বিরুদ্ধে একে একে বিভিন্ন অভিযোগ এনেছেন। তিনি তার পোস্টে মুনিরকে ‘মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, তার নীতির কারণে পাকিস্তান ভয়াবহ অস্থিতিশীলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
ইমরান খান বলেন, "অসীম মুনিরের নীতি পাকিস্তানের জন্য ধ্বংসাত্মক। তার এসব নীতির কারণে সন্ত্রাসবাদ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে, যা আমাকে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করে।" ইমরানের এই অভিযোগ পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এবং রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে তীব্র আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
আদিয়ালা জেলে সাক্ষাৎ ও ইমরানের অভিযোগ
ইমরান খান এই বিস্ফোরক মন্তব্যটি তার বোন ড. উজমা খানের সঙ্গে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা জেলে সাক্ষাতের পর প্রকাশ করেন। তাদের মধ্যে এই সাক্ষাতে পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি এবং সেনাপ্রধানের নীতির বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছিল। ইমরান খান অভিযোগ করেন যে, অসীম মুনির পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার বদলে পশ্চিমা শক্তিদের সন্তুষ্ট করার জন্য কাজ করছেন। তার মতে, মুনিরের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তগুলো পাকিস্তানের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠছে এবং এসব সিদ্ধান্ত পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দুর্বল করে তুলছে।
ইমরান আরও দাবি করেন, “পাকিস্তানের জন্য তার (মুনির) কোনো উদ্বেগ নেই। শুধুমাত্র পশ্চিমাদের খুশি করতে তিনি এসব করছেন। ইচ্ছাকৃতভাবে আফগানিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছেন, যেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাকে ‘মুজাহিদ’ হিসেবে দেখা হয়।”
পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদ পরিস্থিতি ও ইমরানের উদ্বেগ
ইমরান খানের দাবি অনুযায়ী, সেনাপ্রধান অসীম মুনিরের নীতির কারণে পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদের ঘটনা বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, "মুনির প্রথমে আফগানদের হুমকি দিয়েছেন। তারপর পাকিস্তান থেকে আফগান শরণার্থীদের বের করে দিয়েছেন এবং ড্রোন হামলা চালিয়েছেন, যার পরিণতি হিসেবে এখন সন্ত্রাসবাদের উস্ফলন দেখা যাচ্ছে।"
ইমরান খান তার পোস্টে আরও বলেছেন, “পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব এবং নাগরিক নিরাপত্তা যেন এখন শুধুমাত্র বিদেশি শক্তির সন্তুষ্টি পাওয়ার দিকে ঝুঁকছে।”
এছাড়া, তিনি অভিযোগ করেছেন যে, অসীম মুনিরের নির্দেশেই তাকে এবং তার স্ত্রীকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে, যা তার রাজনৈতিক বিশ্বাসের প্রতি সরাসরি আঘাত বলে মনে করেন তিনি।
রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হতে পারে
ইমরান খানের এই মন্তব্য পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত করতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। তার বিরুদ্ধে এই সময়ে এমন বিস্ফোরক মন্তব্য প্রকাশ্যে আসা একেবারেই রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে। সেনাপ্রধানের পক্ষ থেকে এখনও এই বিষয়ে কোনো প্রকাশ্য প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি, তবে বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন যে, এই ধরনের মন্তব্য পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিবেশে নতুন বিভাজন তৈরি করতে পারে।
এছাড়া, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এবং রাজনৈতিক দলের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে দেশের শাসন ব্যবস্থা আরও অসুস্থ হতে পারে। পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসে সেনাবাহিনীর ভূমিকা সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ ছিল, এবং এর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে খণ্ডযুদ্ধের ঘটনা প্রায়ই ঘটছে।
পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে অস্থিরতা
ইমরান খানের বক্তব্য এবং পাকিস্তানের রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে সাধারণ জনগণের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে। পাকিস্তান বর্তমানে বেশ কিছু রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে রয়েছে, যেমন মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্ব, এবং সামাজিক অব্যবস্থা। এর মধ্যে আরও একবার সেনাপ্রধানের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক দেশের জনগণের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারে, যা দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং সামাজিক স্থিতিশীলতার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
ইমরান খান ও সেনাপ্রধানের সম্পর্কের ইতিহাস
ইমরান খান এবং সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল অসীম মুনিরের সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরে জটিল। ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন তেহরিক-ই-ইনসাফ (PTI) দল ২০১৮ সালে নির্বাচনে জয়লাভ করার পর সেনাবাহিনী তার শাসনে এক শক্তিশালী ভূমিকা পালন করেছিল। তবে, গত কয়েক বছর ধরে তাদের সম্পর্কের মধ্যে নানা ধরনের টানাপোড়েন দেখা গেছে, বিশেষ করে পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং সামরিক বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে।
সম্ভাব্য প্রভাব ও ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ
এই পরিস্থিতির পর, পাকিস্তানের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কী হবে তা নিয়ে এখনই কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যাচ্ছে না। তবে, এই ধরনের তীব্র মন্তব্য এবং পারস্পরিক অভিযোগ পাকিস্থানের নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা এবং রাজনৈতিক পরিবেশের ওপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।
ইমরান খান এবং সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল অসীম মুনিরের মধ্যে এই দ্বন্দ্ব দেশের জনগণের মধ্যে নানা ধরনের প্রশ্ন সৃষ্টি করতে পারে। তবে, সামরিক বাহিনী এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আরও সংলাপ এবং সমঝোতার মাধ্যমেই দেশের স্বার্থে একটি সমাধান আসতে পারে।
সূত্র: এনডিটিভি
