সেনা-নৌ-বিমান ৩ বাহিনী প্রধান হাসপাতালে দেখে গেলেন খালেদা জিয়াকে
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেখতে মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতাল পরিদর্শন করেন তিন বাহিনীর প্রধানরা। সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান এবং বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান হাসপাতালে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার খোঁজ নেন।
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ও চিকিৎসা
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বেশ কিছুদিন ধরে শারীরিক নানা সমস্যায় ভুগছেন। তার দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার মধ্যে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি ও ফুসফুসের সমস্যা, চোখের সমস্যা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বর্তমানে তিনি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গত ২৩ নভেম্বর থেকে তার অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার ফুসফুসে ইনফেকশন ধরা পড়েছে, যার কারণে তার শারীরিক অবস্থা কিছুটা সংকটময় হয়ে উঠেছে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের দৃষ্টি
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় স্থানীয় এবং বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা সমন্বিতভাবে কাজ করছেন। তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও পরামর্শের জন্য লন্ডন থেকে চিকিৎসকদের একটি দল আজ (২ ডিসেম্বর) বাংলাদেশে আসছে। ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক, জানিয়েছেন যে যদি বিদেশে চিকিৎসার প্রয়োজন হয়, তবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, ‘দয়া করে গুজব ছড়াবেন না, কারণ খালেদা জিয়া চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে চলছেন এবং তার সুস্থতার জন্য সবাই চেষ্টা করছেন।’
ডা. জাহিদ হোসেন হাসপাতালের সামনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন এবং কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি দলের নেতা-কর্মীদের এবং জনগণকে খালেদা জিয়ার জন্য ধৈর্য ধরতে এবং গুজব না ছড়ানোর আহ্বান জানান।
খালেদা জিয়ার মুক্তি ও চিকিৎসার ইতিহাস
২০১৯ সালে খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় কারাগারে যান, তবে ২০২০ সালে তার শর্তাধীন মুক্তির সুযোগ আসে। ২০২১ সালের ৫ আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দাবিতে অনুষ্ঠিত গণঅভ্যুত্থানে খালেদা জিয়া মুক্তি পান। এরপর তিনি চিকিৎসার জন্য ২০২২ সালের জানুয়ারিতে লন্ডনে যান এবং ১১৭ দিন পর দেশে ফিরে আসেন। তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য নিয়মিত এভারকেয়ার হাসপাতালে যাওয়ার পর তিনি বর্তমানে সেখানে চিকিৎসাধীন আছেন।
হাসপাতালে বাহিনী প্রধানদের উপস্থিতি
খালেদা জিয়াকে দেখতে তিন বাহিনীর প্রধানদের উপস্থিতি দেশের রাজনৈতিক এবং সামাজিক আলোচনায় ব্যাপক গুরুত্ব পায়। হাসপাতালের গেটের সামনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির অনেক নেতা-কর্মী এবং খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা। তারা সকলেই তার দ্রুত সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করছেন।
এদিকে, সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান এবং বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান খালেদা জিয়ার চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন এবং তার সুস্থতার জন্য দোয়া করেন। তারা সরকারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য সমস্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
দেশজুড়ে খবরের প্রতিক্রিয়া
খালেদা জিয়ার অসুস্থতার খবর দেশের গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে। তার অসুস্থতা নিয়ে অনেক রাজনৈতিক আলোচনা শুরু হয়েছে। দলীয় কর্মী, সমর্থক এবং সাধারণ জনগণ তাঁর সুস্থতার জন্য উদ্বিগ্ন। গুজব রটানোর অভিযোগ উঠেছে কিছু স্থানীয় মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এসব গুজবের বিরুদ্ধে ডা. জাহিদ হোসেন জনসাধারণকে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেছেন, গুজব ছড়ানো ন্যায়সংগত নয় এবং এতে তার চিকিৎসার প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হতে পারে।
বিদেশি চিকিৎসক দলের আগমন
এছাড়া, লন্ডন থেকে আসা বিদেশি চিকিৎসক দলের আগমনও বিষয়টির গুরুত্ব বাড়িয়েছে। যদি তারা পরামর্শ দেন, তবে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর পরিকল্পনা নেওয়া হবে। দেশি ও বিদেশি চিকিৎসকদের চিকিৎসায় বিএনপি চেয়ারপারসনের সুস্থতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন ডা. জাহিদ।
এভারকেয়ার হাসপাতালের ভূমিকা
এভারকেয়ার হাসপাতাল, যেখানে খালেদা জিয়া চিকিৎসাধীন আছেন, এটি বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান। হাসপাতালটি আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা প্রদান করে এবং এর চিকিৎসকরা উচ্চমানের সেবা প্রদান করে থাকে। হাসপাতালের পরিচালনার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়, যা খালেদা জিয়ার মতো একটি বড় ব্যক্তিত্বের চিকিৎসার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শেষ কথা
খালেদা জিয়ার চিকিৎসার প্রক্রিয়া দেশবাসীর কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক নেতা, গণতন্ত্রের প্রতীক হিসেবে তার সুস্থতা দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপরও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। তার স্বাস্থ্য দ্রুত ভালো হয়ে উঠবে এমন প্রত্যাশা সকলের।
তবে, শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত সকলকে শান্ত থাকতে হবে এবং কোন ধরনের গুজব বা অসত্য তথ্য ছড়ানোর মাধ্যমে পরিস্থিতি জটিল না করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
উল্লেখযোগ্য যে, খালেদা জিয়ার অসুস্থতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নানান তথ্য নিয়মিতভাবে গণমাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে এবং তার রাজনৈতিক প্রভাবের কারণেও বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হচ্ছে।
