খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স দিতে চায় কাতার: বিএনপির চিকিৎসা সহায়তায় নতুন উদ্যোগ
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য কাতার এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে। কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, কাতারের পক্ষ থেকে ৪ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সকালে বিএনপির কাছে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
কাতারের এ সহায়তা খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে, বিশেষ করে তার শারীরিক অবস্থার ক্রমাগত অবনতি হওয়ার কারণে। এর আগে, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কাতারের রাষ্ট্রদূত সেরাইয়া আলী আল কাহতানির কাছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করতে চিঠি দিয়েছিলেন, যার পরিপ্রেক্ষিতে কাতার এই সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে।
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি:
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, যিনি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন, গত ২৩ নভেম্বর রাতে শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে তাকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে পরীক্ষায় তার ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়ে, যার কারণে তাকে চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে রাখা হয়। তবে, গত ২৯ নভেম্বর তার শারীরিক অবস্থার আরো অবনতি ঘটে, এবং তাকে এসডিইউ থেকে সিসিইউতে স্থানান্তরিত করা হয়।
এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের প্রস্তাব:
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২৯ নভেম্বর কাতারের রাষ্ট্রদূতের কাছে এক চিঠি পাঠিয়ে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করার অনুরোধ করেছিলেন। কাতারের পক্ষ থেকে এই সহায়তার প্রস্তাবের মাধ্যমে, একটি আকাশপথে চিকিৎসা সরবরাহের সুযোগ তৈরি হতে পারে, যা খালেদা জিয়ার জন্য খুবই উপকারী হতে পারে, বিশেষ করে যদি তাকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন হয়।
চিকিৎসা সহায়তায় আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ দল:
এদিকে, খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রিচার্ড বিয়েল ৩ ডিসেম্বর ঢাকায় এসে যোগ দেন তার চিকিৎসায়। তার সঙ্গে চীন থেকে আসা চার সদস্যের একটি চিকিৎসক দলও গতকাল রাত ৯টার পর ঢাকায় অবতরণ করেন এবং তারা সরাসরি এভারকেয়ার হাসপাতালে এসে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করেছেন।
দেশের একদল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস হাসপাতালের চিকিৎসক এবং লন্ডন ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের অধীনে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলছে। ১ ডিসেম্বর চীনের পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি চিকিৎসক দল ঢাকায় পৌঁছেছিল, এবং তারা খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় সহায়তা করতে এভারকেয়ার হাসপাতালে যোগদান করেন।
এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা:
এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে আজও বিএনপি নেতা-কর্মীদের ভিড় দেখা গেছে, যারা খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করছেন। ৪ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এভারকেয়ার হাসপাতালে দলের নেতা-কর্মীদের ভিড় আরও বৃদ্ধি পেয়েছে, যা প্রমাণ করে যে, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার প্রতি দলের সদস্যদের গভীর মনোযোগ এবং ভালোবাসা রয়েছে।
এভারকেয়ার হাসপাতাল, যা বাংলাদেশের অন্যতম সেরা হাসপাতাল হিসেবে পরিচিত, সেখানে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলছে। তার চিকিৎসার জন্য সিসিইউ (করনেট কেয়ার ইউনিট) তদারকি করা হচ্ছে, এবং তার শারীরিক অবস্থার উন্নতির জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করা হচ্ছে।
খালেদা জিয়ার রাজনীতি ও দলের ভূমিকা:
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে খালেদা জিয়া এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। ১৯৭০-এর দশকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আসার পর থেকে তিনি দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন। তার নেতৃত্বে বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক শক্তি হয়ে ওঠে। তবে, দীর্ঘদিন ধরে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি, রাজনৈতিক সমস্যা এবং দুর্নীতির মামলা নিয়ে তিনি কিছুটা বিতর্কিত হয়েছেন।
তবে, তার স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে বিএনপি এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা তার জন্য অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। দলের পক্ষ থেকে বারবার সরকারকে তার চিকিৎসার সুযোগ দিতে বলা হয়েছে, এবং বর্তমানে তাকে চিকিৎসার জন্য সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক সহায়তা প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
পাকিস্তান ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা:
এছাড়াও, খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় পাকিস্তান, যুক্তরাজ্য এবং অন্যান্য দেশগুলির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে। বিভিন্ন দেশ থেকে চিকিৎসক দল আসার মাধ্যমে, খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় অনেক আন্তর্জাতিক সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে, যা তার দ্রুত সুস্থতার জন্য সহায়ক হতে পারে।
এটা স্পষ্ট যে, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা দেশ এবং বিদেশের সকল সহায়তার মাধ্যমে এগিয়ে চলছে এবং কাতারের এই সহায়তা সেই পথেরই একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া:
খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে দেশজুড়ে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। তার সুস্থতার জন্য বিএনপি নেতাকর্মীরা বারবার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন, আর সরকারের পক্ষ থেকেও তাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর বিষয়ে নানা আলোচনা চলেছে।
এর মধ্যে কাতারের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সিদ্ধান্ত হতে পারে, যা বিএনপি নেত্রীকে সুচিকিৎসার মাধ্যমে দ্রুত সুস্থ করার পথে এক নতুন পদক্ষেপ হতে পারে।
সামনের দিনগুলো:
এখনকার পরিস্থিতি অনুযায়ী, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা এবং তার সুস্থতা নিয়ে দেশব্যাপী নানা আলোচনা চলছে। কাতারের এয়ার অ্যাম্বুলেন্স সহায়তা তাকে বিদেশে চিকিৎসা গ্রহণের সুযোগ দিতে পারে, যার ফলে তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে দেশে ফিরতে পারেন। তবে, এখনও তার শারীরিক অবস্থার উন্নতির জন্য চিকিৎসকরা নিরলসভাবে কাজ করছেন।
এটি শুধু খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত বিষয় নয়, বরং একটি বড় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এটি গুরুত্ব পাচ্ছে, যেখানে তার সুস্থতা দেশীয় রাজনীতির ভবিষ্যতের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
