কিংবদন্তী নায়িকা ববিতা: কোথায় আছেন এবং কেমন আছেন?
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের উজ্জ্বল নক্ষত্র ববিতা (আসল নাম: ফরিদা আক্তার) আজও কোটি দর্শকের হৃদয়ে স্থান করে আছেন। ৭২ বছর বয়সী এই কিংবদন্তি অভিনেত্রী বর্তমানে বেশিরভাগ সময় কানাডায় থাকেন। যদিও তিনি বছরে কিছু সময় ঢাকায় এসে তার পরিবার এবং বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটান। ঢাকার গুলশানে তার একটি আলীশান বাড়ি রয়েছে, যেখানে তিনি ফিরে আসলে তার বোন সুচন্দা এবং চম্পার সঙ্গে বেশ সময় কাটান।
ববিতার ছেলে অনিক, যিনি বর্তমানে কানাডায় চাকরি করছেন, তার সঙ্গেই বেশিরভাগ সময় কাটান। কিছুদিন পর পর তিনি কানাডায় গিয়ে ছেলের সঙ্গে সময় কাটিয়ে আসেন। তবে, দেশে আসলেই ববিতা তার চলচ্চিত্র জীবনের স্মৃতি এবং পুরনো সহকর্মীদের সঙ্গে মিলিত হন।
ববিতার শৈশব ও চলচ্চিত্রের যাত্রা
ববিতার শৈশব চলচ্চিত্র পরিবেশে কাটে। বড় বোন সুচন্দা এবং ছোট বোন চম্পা ছিলেন জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনেত্রী। তাদের অনুপ্রেরণায় ছোটবেলা থেকেই তিনি চলচ্চিত্রের প্রতি আকৃষ্ট হন। প্রথমদিকে তিনি শিশু শিল্পী হিসেবে কাজ শুরু করেন, পরে জহির রায়হানের "জ্বলতে সূর্য নিভে গেছে" ছবিতে নায়িকা হিসেবে তার যাত্রা শুরু হয়।
ববিতার চলচ্চিত্রকর্ম
ববিতা শুধু একজন অভিনেত্রী নন, তিনি বাংলা চলচ্চিত্রের এক অনন্য অধ্যায়। তার অভিনয় ক্যারিয়ার spanning প্রায় তিন দশক। ববিতার ক্যারিয়ারে "অশনি সংকেত" (সত্যজিৎ রায়), "সারেং বৌ", "নয়নমণি", "বসুন্ধরা"—এইসব চলচ্চিত্রের চরিত্রগুলিই তাকে চিরকাল স্মরণীয় করে রেখেছে। তিনি বিশ্বাস করেন, চলচ্চিত্রে তার উপস্থিতি কেবল একটি সময়ের জন্য নয়, ইতিহাসের অংশ হয়ে গেছে।
আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা
ববিতা শুধু বাংলাদেশে নয়, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও এক বিশেষ জায়গা তৈরি করেছেন। "অশনি সংকেত" ছবির জন্য তিনি কান চলচ্চিত্র উৎসবে অংশগ্রহণ করেন, যেখানে ছবিটি ব্যাপক প্রশংসা পায়। ইউরোপ, এশিয়া—বিশ্বজুড়ে ছবিটি সমাদৃত হয়। এছাড়া, তিনি ইউনেস্কো এবং ইউনিসেফের মতো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজও করেছেন।
বর্তমান সময়
বর্তমানে ববিতা চলচ্চিত্রের পেছনে থাকলেও তার পুরনো দিনগুলোর স্মৃতি এবং ভালো ছবির প্রতি তার ভালোবাসা এখনও অটুট। তিনি মনে করেন, আজকের চলচ্চিত্রের গুণগত মান আগের মতো নেই। বিশেষ করে, ভালো গল্পের ছবি এখন অনেক কম তৈরি হয়, যা একসময় ছিল পরিচালকরা সাহিত্যের ভিত্তিতে এবং সমাজ সচেতনতার আলোকে ছবি নির্মাণ করতেন।
ববিতা তার একমাত্র সন্তান অনিকের সঙ্গে কানাডায় বেশিরভাগ সময় কাটান, তবে দেশে আসলে তিনি বেশিরভাগ সময় তার বোনদের সাথে কাটান। সিনেমার প্রতি তার প্রেম কখনো কমেনি, তিনি বলেন, "সিনেমা আমার প্রেম, আমার জীবন"।
নতুন প্রজন্মের জন্য পরামর্শ
বর্তমান প্রজন্মের অভিনেত্রীদের জন্য ববিতার পরামর্শ, "অভিনয়কে ভালোবাসতে হবে। শুধু গ্ল্যামার দেখে পেশায় আসা যাবে না। নিয়মিত শিখতে হবে, নিজের স্কিল বাড়াতে হবে। সবকিছুই শেখার মধ্যে রয়েছে। নিজের প্রতি সততা রাখতে হবে, তাহলেই টিকে থাকা সম্ভব।"
ববিতার অভিনয় শুধু চলচ্চিত্রে নয়, তার জীবনও একটি অনুপ্রেরণা। তিনি আজও তার প্রজন্মের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, যা বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবে।
