ফের বিবাহবন্ধনে আবু ত্বহা ও সাবিকুন নাহার: আবেগঘন বার্তায় জানালেন নতুন শুরু
ইসলামিক বক্তা আবু ত্বহা মুহাম্মদ আদনান এবং তাঁর প্রাক্তন স্ত্রী সাবিকুন নাহারকে ঘিরে আলোচনার শেষ নেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বহুদিন ধরেই তাদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে নানা আলোচনা হয়। তবে বিচ্ছেদের মাত্র এক মাসের মধ্যেই আবার নতুন করে সম্পর্ক পুনর্গঠনের সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে তা নতুন আলোচনার জন্ম দেয়।
২ ডিসেম্বর সাবিকুন নাহার নিজ ফেসবুক পোস্টে আনুষ্ঠানিকভাবে জানান, তারা আবারও বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। এ পোস্টে ছিল আবেগ, আত্মসমালোচনা, কৃতজ্ঞতা এবং সন্তানদের জন্য গভীর মমতার প্রকাশ।
বিচ্ছেদ থেকে ফের সংসারে—ঘটনার পেছনের গল্প
২১ অক্টোবর তাদের আনুষ্ঠানিক বিচ্ছেদ ঘটে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ খবর ছড়িয়ে পড়তেই অনেকে বিস্মিত হন। কারণ দাম্পত্য জীবনে তাদের ভালবাসা, পারস্পরিক সম্প্রীতির কথা বহুবারই আলোচনায় এসেছে।
তবে জীবন সবসময় একইরকম সরল পথে চলে না।
ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত, ভুল বোঝাবুঝি, মানসিক চাপ—সব মিলিয়ে তারা বিচ্ছেদের পথে হাঁটতে বাধ্য হন। কিন্তু এই বিচ্ছেদ যে তাদের জন্য স্থায়ী সিদ্ধান্ত ছিল না, তা স্পষ্ট হলো আজকের পুনরায় বিবাহের ঘোষণায়।
সাবিকুন নাহারের আবেগঘন পোস্ট: পুরনো ভুল, নতুন সিদ্ধান্ত
তার পোস্টের শুরুতেই তিনি লেখেন—
“আলহামদুলিল্লাহ! Sabiqun Nahar Sarah got married with Abu Taw Haa Muhammad Adnan.”
এই লাইনেই বোঝা যায়—তাদের বিচ্ছেদ যে স্থায়ী ছিল না, বরং তা তাদের সম্পর্কের একটি কঠিন অধ্যায় মাত্র।
এরপর তিনি দুনিয়ার ক্ষণস্থায়িত্ব, পরকালের হিসাব এবং জীবনের মূল লক্ষ্য নিয়ে গভীর ধর্মীয় অনুভূতি প্রকাশ করেন।
তিনি জানান—
-
মেয়ের “বাবা কই?” প্রশ্ন তাকে বারবার নাড়া দিয়েছে
-
ছেলে উসমানের বিভ্রান্ত দৃষ্টি তাকে মায়ের অভাব আরও গভীরভাবে অনুভব করিয়েছে
-
এই আবেগই তাঁকে আবার সংসারে ফিরিয়ে এনেছে
তিনি লিখেছেন—
“উসমান ও আয়িশা তাদের বাবা–মাকে ফিরে পেয়েছে!”
এই লাইনটি তাঁর পোস্টের সবচেয়ে আবেগপূর্ণ অংশ, যা হাজারো পাঠকের হৃদয়ে দাগ কেটেছে।
ভালবাসা ও ভুল স্বীকার—দুইয়েরই উপস্থিতি
পোস্টে তিনি স্বীকার করেছেন—
-
কিছু সিদ্ধান্ত ভুল ছিল
-
ভুল বোঝাবুঝি তৈরির মতো আচরণ হয়েছিল
-
রাগ ও জেদের কারণে সম্পর্কের টানাপোড়েন বেড়েছিল
তবে একই সঙ্গে তিনি লিখেছেন—
“তুমি মুখ বুজে সব সহ্য করেছো। যা উদ্দেশ্য ছিল না, তা হয়ে গেছে।”
এমন আন্তরিক স্বীকারোক্তিতে বোঝা যায়—তাদের নতুন বিয়ে শুধু আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নয়, বরং মানসিক পরিণতিও যুক্ত হয়েছে।
আবু ত্বহাকে উদ্দেশ্য করে হৃদয়স্পর্শী বার্তা
পোস্টের শেষাংশে সাবিকুন নাহার আবু ত্বহাকে উদ্দেশ্যে করে অত্যন্ত আবেগপূর্ণ বার্তা লেখেন। তিনি বলেন—
-
“তুমি আমার হৃদয়ের স্পন্দন”
-
“ভুল বুঝেছি, কষ্ট দিয়েছি”
-
“তোমাকে ফিরিয়ে পেয়ে আমার আনন্দের ভাষা নেই”
এছাড়া তিনি তাঁর স্বামীর ধর্মীয় জীবন, ধৈর্য এবং চরিত্রের প্রশংসাও করেছেন।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য লাইনটি—
“আমি তোমার জন্য জীবন দিয়ে হলেও নিজেকে প্রমাণ করব ইনশাআল্লাহ।”
এ লেখাটি থেকে বোঝা যায়, তাদের সম্পর্ক নতুন করে গড়ে উঠছে আরও দৃঢ় ভিত্তির উপর।
দাম্পত্যে দ্বিতীয় সুযোগ—সমাজে ইতিবাচক বার্তা
এই পুনর্মিলন কেবল তাদের নিজেদের জীবনে নয়, সমাজের জন্যও একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে। কারণ—
-
দাম্পত্যে ভুল–বোঝাবুঝি হওয়া স্বাভাবিক।
কিন্তু অনেকেই সংশোধনের সুযোগ দেন না। -
সন্তানদের ভবিষ্যৎ বিবেচনায় থাকা জরুরি।
এখানে উসমান ও আয়িশার আবেগই দুজনকে আবার এক করেছে। -
ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও পুনর্গঠন প্রসংশনীয়।
ইসলাম দাম্পত্য রক্ষার গুরুত্ব দেয়।
এই পুনর্মিলন সেই মূল্যবোধকে আবার মনে করিয়ে দিয়েছে।
সামাজিক প্রতিক্রিয়া—উষ্ণ অভিনন্দনের বন্যা
পোস্টটি প্রকাশ পাওয়ার সাথে সাথে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুভেচ্ছা বার্তা উঠতে থাকে।
অনেকেই বলেন—
-
“এটাই সঠিক সিদ্ধান্ত।”
-
“শিশুদের জন্য সবচেয়ে আনন্দের খবর।”
-
“দাম্পত্য রক্ষার উদাহরণ।”
কিছু সমালোচনাও এসেছে, তবে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়াই সংখ্যায় বেশি।
আবু ত্বহা–সাবিকুন নাহার: জনপ্রিয়তার কারণ
বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের মাঝে আবু ত্বহা বেশ পরিচিত ইসলামিক বক্তা। তাঁর বক্তব্যের ভাষা, যুক্তি এবং সহজ-সরল উপস্থাপনা তাঁকে জনপ্রিয় করেছে।
অন্যদিকে সাবিকুন নাহারও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় এবং স্বামী–স্ত্রী হিসেবে তাদের উপস্থিতি বরাবরই আলোচনায় ছিল।
তাই তাদের ব্যক্তিগত জীবনের সংবাদও সাধারণ মানুষকে গভীরভাবে নাড়া দেয়।
পরিবারের পুনর্গঠন—সন্তানদের ফিরে পাওয়া
একটি বিচ্ছেদ শুধু দুইজন মানুষের নয়—পুরো পরিবারের ভাঙন।
এখানে সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা হয় শিশুদের।
সাবিকুন নাহারের পোস্টে দেখা যায়—
-
মেয়ের বাবাকে খোঁজার ব্যাকুলতা
-
ছেলের মায়ের অভাবে বিভ্রান্তি
এই অনুভূতিগুলোই তাদের মধ্যে সম্পর্ক মেরামতের তাগিদ বাড়িয়েছে।
“উসমান ও আয়িশা তাদের বাবা–মাকে ফিরে পেয়েছে” —এই বাক্যটি প্রমাণ করে, তাদের সিদ্ধান্তের মূল কেন্দ্রে ছিল সন্তানদের অনুভূতি।
ধর্মীয় অনুভূতি ও তাকদিরের প্রতি বিশ্বাস
পোস্টে তিনি লিখেছেন—
-
“দুনিয়া প্রতারণা”
-
“তাকদিরের কাছে বড়রাও অসহায়”
-
“ত্রুটির মাঝেও আল্লাহর রহমত কাজ করেছে”
এটি দেখায়, এই সিদ্ধান্ত ব্যক্তিগত আবেগের পাশাপাশি ধর্মীয় উপলব্ধির ফল।
ভবিষ্যতের বার্তা—সব ভুল পরিষ্কার হবে
তিনি লেখেন—
“আল্লাহ চাইলে খুব শিগগির সব অযাচিত বিষয় দুনিয়ার সামনে পরিষ্কার হবে।”
এটি ইঙ্গিত করে—বিচ্ছেদ নিয়ে যে ভুল ধারণা বা গুজব ছিল, সেগুলো তারা সময়মতো পরিষ্কার করবেন।
উপসংহার
আবু ত্বহা মুহাম্মদ আদনান এবং সাবিকুন নাহারের পুনরায় বিয়ে শুধু তাদের ব্যক্তিগত জীবনের নতুন অধ্যায় নয়—এটি:
-
দাম্পত্যের মূল্য,
-
পারস্পরিক ক্ষমাশীলতা,
-
সন্তানের প্রতি দায়িত্ব,
-
এবং সম্পর্ককে দ্বিতীয় সুযোগ দেওয়ার গুরুত্বের একটি সুন্দর উদাহরণ।
তাদের এই সিদ্ধান্ত সমাজে ইতিবাচক বার্তা বহন করে—
ভুল হতে পারে, কিন্তু সম্পর্ক টিকে থাকে চেষ্টা ও ভালবাসায়।
