খালেদা জিয়াকে মধ্যরাতের পরে বা ভোরে লন্ডনে নেওয়া হবে: কাতার দিচ্ছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স


বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী, খালেদা জিয়াকে আজ মধ্যরাতের পরে বা আগামীকাল ভোরে লন্ডনে নেওয়া হতে পারে। কাতার রাজ্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে খালেদা জিয়াকে দেশে থেকে লন্ডনের একটি নির্ধারিত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বুধবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, বেলা তিনটার দিকে রাজধানী ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে এক সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার চিকিৎসক, ড. এ জেড এম জাহিদ হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থার ভিত্তিতে এবং মেডিকেল বোর্ডের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, তাকে লন্ডনে পাঠানোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

কাতারের এয়ার অ্যাম্বুলেন্স এবং চিকিৎসকদের দল:

খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় সহায়তার জন্য কাতার রাজ্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ব্যবস্থা করবে, যা তার জন্য একটি অত্যন্ত নিরাপদ এবং উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে। জাহিদ হোসেন জানিয়েছেন, বিদেশে যাওয়ার সময় খালেদা জিয়ার সঙ্গে দুজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও অ্যারোনটিক্যাল ফিজিশিয়ান থাকবেন, যারা বিমানে তার শারীরিক অবস্থা মনিটর করবেন। এই ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সমস্ত প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে, যাতে কোনো ধরনের সমস্যা ছাড়াই তাকে সুস্থভাবে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয়।

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা:

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তথ্য প্রদান করেন তার চিকিৎসক। তিনি বলেন, "খালেদা জিয়ার ফুসফুসে সংক্রমণের কারণে কিছু জটিলতা তৈরি হয়েছিল, তবে বর্তমানে তার অবস্থা কিছুটা উন্নতির দিকে। তবে হৃদ্‌যন্ত্রের কিছু জটিলতা এখনও রয়ে গেছে।" বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, তার চিকিৎসায় চূড়ান্ত পরামর্শ দেওয়া হয়েছে এবং পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে তাকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে গঠিত মেডিকেল বোর্ডে দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের সমন্বয়ে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলছে। গত কয়েকদিনে তিনি যুক্তরাজ্য, চীন এবং অন্যান্য দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সশরীরে পরীক্ষা-নিরীক্ষার আওতায় এসেছেন। এছাড়া, তিনবার ভার্চুয়ালি তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে, যাতে তার সর্বশেষ চিকিৎসা পরিকল্পনা করা সম্ভব হয়।

গত ১২ দিন ধরে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া:

খালেদা জিয়া গত ১২ দিন ধরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। হাসপাতালের সুত্রে জানা গেছে, তার শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। ২৩ নভেম্বর রাতে শ্বাসকষ্ট শুরু হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তার ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়ে, যা তার শারীরিক অবস্থার অবনতির কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এরপর ২৯ নভেম্বর তার অবস্থা আরও খারাপ হলে তাকে সিসিইউতে স্থানান্তরিত করা হয়।

এভারকেয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তার শারীরিক অবস্থার উন্নতির জন্য আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। এতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা অংশগ্রহণ করছেন।

কীভাবে লন্ডনে নেওয়া হবে খালেদা জিয়াকে:

খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাতারের রাজ্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ব্যবস্থা করবে, যা অত্যন্ত নিরাপদ এবং দ্রুতগতিতে পৌঁছানোর জন্য ডিজাইন করা। খালেদা জিয়ার চিকিৎসক দলের সাথে থাকবেন দুজন বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং অ্যারোনটিক্যাল ফিজিশিয়ানরা, যারা বিমানের মধ্যে তার শারীরিক অবস্থা নজরদারি করবেন।

এই প্রস্তুতি অনুযায়ী, সবকিছু ঠিক থাকলে খালেদা জিয়াকে মধ্যরাতের পরে অথবা আগামীকাল ভোরে বিমানযোগে লন্ডন পাঠানো হবে। এই প্রক্রিয়া অবশ্যই দ্রুত এবং সতর্কতার সঙ্গে সম্পন্ন হবে, যাতে খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় কোনো ধরনের ঝুঁকি না হয়।

চীনা ও ব্রিটিশ চিকিৎসকদের উপস্থিতি:

এই সময়ে, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল হিসেবে চীন এবং যুক্তরাজ্য থেকে চিকিৎসকরা ঢাকায় আসছেন। চীন থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল ৩ ডিসেম্বর রাতে ঢাকায় পৌঁছায়, এবং তারা এভারকেয়ার হাসপাতালে এসে খালেদা জিয়াকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। একইদিনে যুক্তরাজ্য থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রিচার্ড বিয়েলও ঢাকায় আসেন এবং সরাসরি খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় অংশগ্রহণ করেন।

এই চিকিৎসকরা খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত পর্যালোচনা করেছেন এবং সর্বশেষ প্রতিবেদন দেখে তার চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এর পাশাপাশি, খালেদা জিয়ার রোগ নির্ণয়ের জন্য আন্তর্জাতিক মানের পরীক্ষা ও পরামর্শ গ্রহণ করা হচ্ছে, যাতে তার চিকিৎসায় কোনো ত্রুটি না হয়।

বিদেশে চিকিৎসার প্রেক্ষাপট:

খালেদা জিয়া একাধিক বার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে গেছেন। ২০২১ সালে, জানুয়ারি মাসে তিনি লন্ডনে চিকিৎসা নিতে যান। সেখানে তাকে প্রথমে একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল, পরে তারেক রহমানের বাসায় চিকিৎসা চলছিল। প্রায় চার মাস পরে, ৬ মে, ২০২১ তিনি দেশে ফিরেন। বর্তমানে, তার শারীরিক অবস্থার কারণে আবারও তাকে বিদেশে চিকিৎসার প্রয়োজন পড়েছে।

দেশে উদ্বেগ:

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে দেশের জনগণের মধ্যে উদ্বেগ অব্যাহত রয়েছে। বিএনপির নেতাকর্মীরা তার সুস্থতার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছেন এবং দলীয় নেতা-কর্মীরা তার প্রতি গভীর ভালোবাসা ও সহানুভূতি প্রদর্শন করছেন। বিএনপির সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য কাতার এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতাও নিঃসন্দেহে তার সুস্থতার সম্ভাবনা বাড়াতে সাহায্য করবে।

শেষ মন্তব্য:

দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সুস্থতা দেশের রাজনীতির জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডন পাঠানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে, এবং তার চিকিৎসায় সব ধরনের আন্তর্জাতিক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। তার সুস্থতা কামনায় দেশবাসী উদ্বিগ্ন রয়েছে এবং সবার প্রার্থনা তাকে সুস্থ হয়ে ফিরে আসার জন্য।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

গিনি-বিসাউয়ে সামরিক হস্তক্ষেপ: প্রেসিডেন্ট ও নেতাদের আটক, নির্বাচনী পরিস্থিতি স্থগিত

এমটি কায়রোসে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা: কেমন আছেন বাংলাদেশি নাবিকরা?

তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারছেন না কেন? দেশের বাইরে থাকা নেতার আসল সত্য!