নানা রাজনৈতিক সমীকরনে, কেন এখন তারেক রহমানের দেশে ফেরা জরুরি?


২০২৫ সালের ২ ডিসেম্বর, বাংলাদেশের রাজনৈতিক মাঠে এক অনিবার্য প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন এবং তিনি রাজধানীর বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন। এই পরিস্থিতিতে, তারেক রহমান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার বড় ছেলে, কেন এখনো দেশে ফিরছেন না, সে নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা নানা ধরনের অনুমান করছেন।

তারেক রহমানের দেশে ফেরা শুধুমাত্র একজন সন্তানের মানবিক দায়িত্ব নয়, এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৭ বছরের নির্বাসন শেষে তারেক রহমানের দেশে ফেরার প্রশ্ন এখন কেন্দ্রবিন্দুতে। তারেক রহমানের দেশে ফেরার পথ এবং সময়ের যে বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা হচ্ছে, তা রাজনৈতিক সংকট, নিরাপত্তা ঝুঁকি, আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনীতি এবং সরকারের উচ্চ পর্যায়ের অবস্থানের উপর নির্ভর করছে।

খালেদা জিয়ার অসুস্থতা: তারেক রহমানের ফিরতে না পারার ব্যাখ্যা

খালেদা জিয়া, যিনি বাংলাদেশের রাজনীতির এক প্রভাবশালী নেত্রী, বর্তমানে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন। গত ২৩ নভেম্বর থেকে তার শারীরিক অবস্থা চরম সংকটাপন্ন হয়ে ওঠে। ২৮ নভেম্বর থেকে দেশে ছড়িয়ে পড়ে নানা গুঞ্জন, তার মধ্যে কিছু মানুষ বলছিলেন, খালেদা জিয়া লাইফ সাপোর্টে আছেন, আবার কেউ বলছিলেন ভেন্টিলেশনে। যদিও তার চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, বেগম জিয়া সিসিইউতে চিকিৎসাধীন এবং কোনো গুজবকে বিশ্বাস না করতে সবাইকে অনুরোধ করেছেন।

এই মুহূর্তে, বিএনপির নেতাকর্মী এবং খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা একাধিকবার সামাজিক মাধ্যমে তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে মন্তব্য করেছেন। গত ২৯ নভেম্বর, তারেক রহমান তার ফেসবুক পেজে একটি স্ট্যাটাস পোস্ট করেন, যেখানে তিনি জানিয়ে দেন, ‘সংকটকালে মায়ের স্নেহ-স্পর্শ পাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা আমারও রয়েছে। তবে এখনই দেশে ফেরার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ আমার জন্য অবারিত ও একক নিয়ন্ত্রণাধীন নয়।’ এই স্ট্যাটাসটি দেশের রাজনীতিতে আলোচনার নতুন দ্বার খুলে দিয়েছে।

রাজনৈতিক বাধা: তারেক রহমানের দেশে ফেরার পেছনের গোপন সমীকরণ

২০০৭ সালে, সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার যখন ক্ষমতা গ্রহণ করেছিল, তখন তারেক রহমানকে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এরপর দীর্ঘ ১৮ মাস কারাগারে থাকার পর ২০০৮ সালে জামিনে মুক্তি পান তিনি। তার পরপরই তিনি সপরিবারে লন্ডনে চলে যান চিকিৎসার জন্য। ২০০৮ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত, দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসনে থাকার পর, তারেক রহমানের দেশে ফেরার পথের অনেক বাধা দূর হয়ে গেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তারেক রহমানের দেশে ফেরার পথে আইনি কোনো বাধা নেই। গত ৫ আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান এবং দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয়েছে, কিন্তু তারেক রহমান তার দেশে ফেরার ব্যাপারে এখনও চুপ। সরকারও একাধিকবার বলেছে, তার দেশে ফেরার ক্ষেত্রে কোনো আইনি বাধা নেই এবং তারা তাকে ট্রাভেল পাস দিতে প্রস্তুত।

তবে, এর পেছনে যে বড় বাধা রয়েছে তা হলো তার নিরাপত্তা ঝুঁকি। বিএনপি নেতারা মনে করেন, তারেক রহমানের দেশে ফিরে আসা সহজ হবে না, কারণ তাঁকে দেশে ফেরানোর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে বিপজ্জনক রাজনৈতিক পরিস্থিতি। দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক ইতিহাসে অনেক নেতা নির্বাসন থেকে দেশে ফেরার পথে আক্রান্ত হয়েছেন। যেমন, ফিলিপাইনের বেনিগনো একিনো জুনিয়র এবং পাকিস্তানের বেনজির ভুট্টো তাদের দেশে ফিরে এসে প্রাণ হারান। তারেক রহমানও একই ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।

আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনীতি: তারেক রহমানের ফেরার পথে বিদেশি প্রতিবন্ধকতা

তারেক রহমানের দেশে ফেরার জন্য আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনীতি একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০০৮ সালের ৩ নভেম্বর উইকিলিকসের ফাঁস হওয়া কাগজপত্র অনুযায়ী, তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি, তারেক রহমানকে দুর্নীতি এবং সহিংস রাজনীতির প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। তবে, গত দেড় দশকে বিশ্ব রাজনীতিতে অনেক পরিবর্তন এসেছে এবং বিএনপির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের বরফও গলতে শুরু করেছে।

ভারতও তারেক রহমানের নেতৃত্ব নিয়ে এক ধরনের অস্বস্তিতে রয়েছে। তারেক রহমানের জাতীয়তাবাদী অবস্থান এবং প্রতিবেশী ভারত সম্পর্কে তার মন্তব্য দেশের ভূ-রাজনীতিতে একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি করেছে। এর ফলে, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তারেক রহমানের দেশে ফেরার পথে কী ধরনের বাধা আসবে তা নিয়ে এখনও অনিশ্চয়তা রয়েছে।

রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং দলীয় ঐক্য

এদিকে, বিএনপির নেতাকর্মীরা মনে করেন, তারেক রহমানের দেশে ফেরার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণ হবে এবং দলের ঐক্য পুনরুদ্ধার হবে। ১৭ বছর ধরে তিনি দলকে অটুট রেখেছেন এবং দলীয় নেতৃত্বে একচ্ছত্র আধিপত্য তৈরি করেছেন। তারেক রহমানের দেশে ফেরার পর, দলের শীর্ষ নেতৃত্বে এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনে একটি নতুন দিগন্তের সূচনা হতে পারে, এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

শেষমেষ: তারেক রহমানের ফেরার পথে শেষ বাধা

তারেক রহমানের দেশে ফেরার প্রধান বাধা ছিল সরকারের পক্ষ থেকে এসএসএফ নিরাপত্তা প্রদান এবং রাজনৈতিক সমীকরণ। ২০২৫ সালের ১ ডিসেম্বর, সরকারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়াকে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা (এসএসএফ) দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়, যা তারেক রহমানের দেশে ফেরার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে দেখছে বিএনপি।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, তারেক রহমান শিগগিরই দেশে ফিরবেন এবং ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের আগে তিনি দেশে পা রাখতে পারেন। তারেক রহমানের দেশে ফেরার সময় কেবল ব্যক্তিগত নয়, এটি একটি রাজনৈতিক মাইলফলকও হতে পারে, যা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পুনর্গঠন ও নির্বাচনী প্রক্রিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

উপসংহার

এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত নয়, তবে বাংলাদেশের জনগণ অপেক্ষায় রয়েছে সেই দিনটির জন্য, যখন তারেক রহমান তার মায়ের শিয়রে বসে দেশের মাটিতে ফিরে আসবেন। তারেক রহমানের ফেরার সঙ্গে আসবে রাজনৈতিক পরিবর্তন, নতুন গণতান্ত্রিক যাত্রার সূচনা এবং দেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে নতুন এক দিগন্ত।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

গিনি-বিসাউয়ে সামরিক হস্তক্ষেপ: প্রেসিডেন্ট ও নেতাদের আটক, নির্বাচনী পরিস্থিতি স্থগিত

এমটি কায়রোসে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা: কেমন আছেন বাংলাদেশি নাবিকরা?

তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারছেন না কেন? দেশের বাইরে থাকা নেতার আসল সত্য!