একই স্থানে বারবার ভূমিকম্পের কারণ জানা গেল: নরসিংদী অঞ্চলে নতুন রহস্য উদঘাটন


বৃহস্পতিবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৫, দেশের বিভিন্ন স্থানে আবারও ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে, যার উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদী। ২১ নভেম্বরের পর এটি সপ্তম ভূমিকম্প, যা এই অঞ্চলের ভূতাত্ত্বিক পরিস্থিতি নিয়ে নতুন প্রশ্ন উঠিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, একই স্থানে বারবার ভূমিকম্প হওয়ার একটি বিশেষ কারণ রয়েছে, যা মূলত আফটারশক বা ভূমিকম্পের পরবর্তী ছোটধাপ হতে পারে। এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৪.১ রিখটার স্কেলে, এবং এর গভীরতা ছিল ৩০ কিলোমিটার।

ভূমিকম্পের প্রেক্ষাপট

নরসিংদী, যা ঢাকা শহরের প্রায় ৩০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ভূমিকম্পের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২১ নভেম্বরের ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর থেকে প্রায় ৬টি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল এই অঞ্চলে। বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, এই ভূমিকম্পগুলির মধ্যে অধিকাংশই আফটারশক। কিন্তু এ ধরনের ঘনঘন ভূমিকম্প কীভাবে একই অঞ্চলে ঘটছে, এই প্রশ্নটি বড় হয়ে উঠেছে।

আফটারশক কি?

আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রুবাইয়াত কবির জানিয়েছেন, "একটি বড় ভূমিকম্পের পর ছোট ছোট ভূমিকম্পের সংঘটন প্রাকৃতিক একটি প্রক্রিয়া। এগুলিকে আফটারশক বলা হয়।" আফটারশকগুলি মূল ভূমিকম্পের পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন মাত্রায় ঘটতে থাকে এবং একেকটি ভূমিকম্পের শক্তি মূল ভূমিকম্পের শক্তির চেয়ে অনেক কম হয়ে থাকে। তবে, এই ধরনের আফটারশকগুলি কখনো কখনো বিপজ্জনক হতে পারে, বিশেষ করে যখন এটি নির্মাণাধীন বা পুরোনো ভবনে আঘাত হানে।

৪ ডিসেম্বরের ভূমিকম্পের বিশ্লেষণ

৪ ডিসেম্বরের ভূমিকম্প সকাল ৭:৩৬ মিনিটে অনুভূত হয়। ইউরোপিয়ান মেডিটেরিয়ান সিসমোলজিক্যাল সেন্টারের (EMSC) তথ্যমতে, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদী, এবং এর গভীরতা ছিল ৩০ কিলোমিটার। এটি রাজধানী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহসহ দেশের আরও বেশ কিছু অঞ্চলে অনুভূত হয়েছে।

ভূমিকম্পের প্রভাব

৪ ডিসেম্বরের ভূমিকম্পে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি, তবে অনেক বাসিন্দা সিসমিক শকের কারণে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে কয়েক সেকেন্ডের জন্য এলিভেটর, যানবাহন ও বিভিন্ন স্থাপনা নড়ে ওঠে। একইভাবে, নরসিংদী অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর পরিস্থিতি অনুসরণ করা হচ্ছে, যদিও প্রাথমিকভাবে বড় ধরনের কোনো ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।

বঙ্গোপসাগরে ভূমিকম্পের ঘটনা

এদিকে, ২ ডিসেম্বর সকাল ৭:৫৬ মিনিটে বঙ্গোপসাগরে ৪.২ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প আঘাত হানে, যার কেন্দ্রস্থল ছিল উপকূল থেকে দূরে। এটি তেমন কোনো ক্ষতি না করলেও, ভূমিকম্পের সিকোয়ার কারণে এই ধরনের ঘটনাগুলি আরও বড় আকার ধারণ করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভারতের ভূবিজ্ঞান মন্ত্রণালয়ের জাতীয় ভূকম্পন কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, বঙ্গোপসাগরে এই ভূমিকম্পের গভীরতা ছিল ৩৫ কিলোমিটার।

ভূমিকম্পের পূর্বাভাস এবং সতর্কতা

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়া খুব কঠিন, তবে ভূমিকম্পের পরে আফটারশক আসা সাধারণ ঘটনা। সিসমোলজিক্যাল প্রতিষ্ঠানগুলো এই ধরনের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ করে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিতে পরামর্শ দেয়। বিশেষ করে ভূমিকম্পের পরবর্তী সময়ে জনসাধারণকে সতর্ক থাকতে এবং জরুরি প্রস্তুতি নিতে উৎসাহিত করা হয়। আবহাওয়া অধিদপ্তর, সিসমোলজিক্যাল সেন্টার এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষ নিয়মিত ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ করে।

ভূমিকম্পের বিজ্ঞান

ভূমিকম্প ঘটে যখন পৃথিবীর পৃষ্ঠের ভেতরে শক্তি জমা হয় এবং সেই শক্তি একসময় ভূগর্ভস্থ শিলার ভাঙন বা শিফটের মাধ্যমে মুক্তি পায়। এটি পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ গতিবিধির ফলস্বরূপ। ভূমিকম্পের ফলে ভূমিতে শিফট, সুনামি এবং অন্যান্য বিপজ্জনক প্রভাব সৃষ্টি হতে পারে। ভূমিকম্পের গভীরতা, মাত্রা এবং উৎপত্তিস্থল এসবের ওপর নির্ভর করে এর প্রভাব কতটা ভয়াবহ হবে।

ভূমিকম্পের পরবর্তী সময়ে সমাজের দায়িত্ব

ভূমিকম্পের পর, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব হল আহতদের সাহায্য করা, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা এবং ভবিষ্যৎ দুর্ঘটনা রোধে সঠিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা। ২১ নভেম্বরের নরসিংদী ভূমিকম্পে অন্তত ১০ জন মারা গিয়েছিলেন এবং কয়েক শত মানুষ আহত হন। এর ফলে নির্মাণাধীন অনেক ভবনে ফাটল দেখা দেয় এবং কিছু ভবন হেলে পড়েছিল। এসব ভবনগুলির পুনঃমূল্যায়ন এবং সংস্কার প্রয়োজন বলে বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করেছেন।

শেষ কথা

ভূমিকম্পের কারণ এবং তা কীভাবে বারবার একই স্থানে ঘটে, এটি প্রকৃতির একটি রহস্যময় দিক। তবে, বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত করেছেন যে আফটারশক একটি সাধারণ প্রাকৃতিক ঘটনা, এবং ভূমিকম্পের পরবর্তী সময়ে এর তীব্রতা কমে আসে। তবুও, এই ধরনের ভূমিকম্পের ফলে মানুষকে সঠিক সচেতনতা এবং প্রস্তুতি নিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে বড় ধরনের বিপদ মোকাবিলা করা যায়।

এদিকে, ইউটিউব চ্যানেলগুলোর মাধ্যমে ভূমিকম্পের বিষয়টি প্রচারিত হলে, এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং আগাম প্রস্তুতির জন্য আরও কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হবে।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

গিনি-বিসাউয়ে সামরিক হস্তক্ষেপ: প্রেসিডেন্ট ও নেতাদের আটক, নির্বাচনী পরিস্থিতি স্থগিত

এমটি কায়রোসে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা: কেমন আছেন বাংলাদেশি নাবিকরা?

তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারছেন না কেন? দেশের বাইরে থাকা নেতার আসল সত্য!